
পঞ্চগড়ে মাদ্রাসার মাইকে সেহরি ডাকাকে কেন্দ্র করে হাফেজিয়া এতিমখানা মাদ্রাসায় দুর্বৃত্তদের হামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার (২২ মার্চ) বিকেলে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের তেলিপাড়া এতিমখানা লিল্লাহ বোডিং মাদ্রাসায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। এতে মাদ্রাসার ২১ জন ছাত্র চার জন শিক্ষক সহ ২৬ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এই ঘটনায় রোববার মাদ্রাসাটির পরিচালক বাকি বিল্লাহ বাদী হয়ে ছয়জনের নাম সহ অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করে পঞ্চগড় সদর মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলেন তেলিপাড়া গ্রামের মনতাজ আলী (৬০), তার তিন পুত্র আলম (৪০), মো. আনছারুল (৩৫) এবং কায়দি আযম (৩০)। কায়দি আযমের স্ত্রী মোছা. ছাবিনা (২৫) মৃত সামছুল হকের পুত্র মো. ফয়জুল(৫০)। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই পুলিশ হামলাকারীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছেন।
মামলার এজাহার এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায় এলাকাবাসীদের সাথে পরামর্শ করেই রমজান মাসে প্রতিরাতে তেলিপাড়া মাদ্রাসা থেকে মুসলমানদের সেহরি খাওয়ার জন্য মাইকে এলান করা হচ্ছিল। মাদ্রাসার সাথে গোবিন্দপুর দরবার শরিফের খানকা শরিফও রয়েছে। গতকাল বিকেলে হঠাৎ করেই তেলিপাড়া এলাকার মনতাজ আলী তার ছেলে আলম সহ ৩০ থেকে ৩৫ জন দলবেঁধে দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে মাদ্রাসায় এসে মাইক বাজানো নিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষকদের হুমকি দেন । প্রথমে মারুফ নামে এক ছাত্রের পড়নের পোষাক ছিড়ে দেয় মনতাজ এক পর্যায়ে মনতাজের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয় । এসময় হামলায় হাফেজ খানার কক্ষ ফার্নিচার ভাঙচুর করেন। ছাত্রদের পোশাক ট্রাং সুটকেস সহ পড়ার ছোট ছোট বেঞ্চ ভাঙচুর করেন হামলাকারীরা। এ সময় কয়েকজন মাদ্রাসার সামনে খানকায় হামলা চালায়। একপর্যায় খানকাটির ভিতরে ঢুকে পড়ে হামলাকারীরা। সেখানে তরিকতের বই খানকার ইতিহাস বোর্ড ভেঙ্গে ফেলে। লাঠিসোঁটা দিয়ে খানকার বেড়া ভেঙ্গে দেয়। মারধর ভাঙচুর চলতে থাকলে মাদ্রাসা ছাত্ররা প্রতিরোধ করতে গিয়ে ছাত্ররা গুরুতর আহত হয়। পরে এলাকাবাসীসহ আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে ছাত্র শিক্ষকদের উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্স যোগে আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে রাতে পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ হেল জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন।
এদিকে রাতে পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ হেল জামান ঘটনাস্থলে যায়। এসময় তেলিপাড়া গ্রামের কয়েকশত গ্রামবাসী নারী পুরুষ জড়ো হয় সেই সাথে হামলাকারীদের শাস্তি দাবি করলে ওসি দোষীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন।
তেলিপাড়া গ্রামের সুলতান নামে এক বাসিন্দা জানান আমার সামনেই হামলাকারীরা ছাত্রদের মারধর করেছেন। কিন্তু তারা দলবদ্ধ হয়ে হামলা করছেন এজন্য প্রতিরোধ করতে পারিনি। একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃস্টি হয়েছিল।
এদিকে হামলার খবর শুনে পঞ্চগড় জেলা কৃষক দলের আব্দুর রাজ্জাক সহ ইউনিয়ন বিএনপি নেতারা তেলিপাড়া মাদ্রাসাটিতে যায়। তিনি রোববার সাংবাদিকদের জানায় আসলে এটি আমার এলাকার একটি জঘন্যতম ঘটনা। ছোট ছোট কোরআন পড়ুয়া ছাত্ররা আহত হয়েছে। দোষীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করার জন্য আমি পুলিশকে বলেছি।
মাদ্রাসাটির পরিচালক বাকি বিল্লাহ জানান শুধু মাত্র সেহরিতে মাইক বাজানোর কারণেই মনতাজ তার পরিবার এবং বাইরে থেকে লোক ভাড়া করে এনে হামলা ভাঙচুর চালিয়েছে। আমার মায়ের মাথায় আঘাত করে হত্যা করতে চেয়েছিল। ভাগ্যক্রমে বেচে যায় আমার মা, তবে তার মাথায় গুরুতর জখম হওয়ায় চিকিৎসা ছয়টি সেলাই দিয়েছেন।
পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ হেল জামান খবর পেয়ে শনিবার রাতে মাদ্রাসা সহ খানকাটি নিজেই পরিদর্শনে গিয়েছি। এলাকাবাসীর সাথে ঘটনার বিস্তারিত জেনেছি। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান তিনি।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর