
নড়াইল সদর উপজেলার কমলাপুর ও গন্ধবখালী এলাকায় গত এক দশক ধরে দুটি সেচ পাম্প বন্ধ থাকায় প্রায় ৫৪০ একর জমিতে চাষাবাদে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। নদী থেকে সরাসরি জমিতে পানি সরবরাহের জন্য স্থাপিত এই সেচ পাম্প দুটি এক সময় কৃষকদের জন্য ছিল সাশ্রয়ী ও কার্যকর পানি সরবরাহের অন্যতম উৎস। কিন্তু বিগত ১০ বছর ধরে পাম্প দুটি অকেজো হয়ে পড়ায় কৃষকদের সেচ ব্যয় বহুগুণে বেড়ে গেছে।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, এখন তারা বাধ্য হয়ে ডিজেলচালিত শ্যালোমেশিন ব্যবহার করছেন, যার ফলে প্রতি মৌসুমে খরচ বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ। ফলে অনেকেই চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
নাকশি গ্রামের কৃষক টুটল মোল্যা বলেন, “এই মাঠে নাকশি, কমলাপুর ও ঘোষপুর গ্রামের কৃষকদের জমি রয়েছে। আগে সেচ পাম্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে পানি পেতাম, পরে বিদ্যুৎ বিলের কথা বলে কিছু টাকা নেওয়া শুরু হয়। কিন্তু এখন পাম্প দু’টি সম্পূর্ণ বন্ধ। বাধ্য হয়ে শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি দিতে হচ্ছে, তাতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণ।”
কমলাপুর গ্রামের আরেক কৃষক চুন্নু গাজি বলেন, “একসময় আমরা তিন শতক জমির জন্য ৯ টাকা করে দিতাম। এখন প্রতি কানিতে (এক কানিতে প্রায় ১.৩৩ একর) ১০০ টাকা করে খরচ হচ্ছে। আগে এই সেচ প্রকল্পের সুবিধায় ধান ও পাট চাষে ভালো লাভ হতো, এখন সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় এই দুটি সেচ পাম্প স্থাপন করা হয়েছিল। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল ৫৪০ একর জমিতে কম খরচে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা। তবে সেচ পাম্প দুটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো থাকায় কৃষি উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০১৯ সালে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব করা হলেও করোনা মহামারির কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন, “সেচ পাম্প দুটি চালু করার জন্য আমরা চাহিদা পত্র পাঠিয়েছি। বাজেট বরাদ্দ পাওয়া মাত্র মেরামত কার্যক্রম শুরু করা হবে।”
এলাকার কৃষকরা দ্রুত সেচ পাম্প চালুর দাবি জানিয়েছেন, যাতে তারা আগের মতো স্বল্প ব্যয়ে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন।
সর্বশেষ খবর
কৃষি, অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর