
টানা তিন দিনের ছুটির সুযোগে দেশের প্রধান পর্যটন গন্তব্য কক্সবাজারে উপচে পড়া ভিড় দেখা যাবে- এটাই ছিল হোটেল-মোটেল মালিক, ট্যুর অপারেটর এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা।
মে দিবস আর সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা তিন দিনের বিরতি পেয়েছেন কর্মব্যস্ত শহুরে মানুষ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
শুক্রবার দুপুর নাগাদ লাবণী পয়েন্ট, কলাতলী, সুগন্ধা, ইনানী কিংবা হিমছড়ির বেলাভূমি ঘুরে দেখা গেল, সাধারণ সময়ের তুলনায় পর্যটক সংখ্যা কম। হোটেল-মোটেলগুলোতেও খালি রুমের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। অনেক হোটেলের সামনে ‘ভাড়া দেওয়া হবে’ সাইনবোর্ড টাঙানো।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম মৌসুমের শেষ এই ছুটিতে অন্তত একবার পর্যটককে শহর ভরে উঠবে। কিন্তু গরমের কারণে মানুষ স্বস্তির বদলে ঘরেই সময় কাটাতে চেয়েছে।’
তিনি জানান, ‘বৃহস্পতিবার কিছু বুকিং হলেও শুক্রবার তা কমে আসে। আমাদের অনেক হোটেলে শুক্রবার ৪০–৫০ শতাংশ কক্ষ খালি পড়ে ছিল। মে দিবসে আগাম বুকিং যা ছিল, তা শুধু এক দিনের জন্য।’
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট ক্লাব ও ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (টুয়াক)-এর সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রচারণার অভাব এবং তীব্র গরম দুটোই কাজ করেছে। যদি সেন্টমার্টিন, মহেশখালী বা রাঙামাটির মতো বিকল্প স্পটগুলোকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিত প্যাকেজ থাকত, তাহলে পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে পারত।’
‘সাগরে এখন ঢেউ বেশ উত্তাল। তাই আমরা প্রতিনিয়ত পর্যটকদের নিরাপদ এলাকায় গোসল করার নির্দেশ দিচ্ছি।’- বলেন সী সেইফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান।
তিনি আরও জানান, এখন ঋতু পরিবর্তনের সময়। সাগরের আচরণও কিছুটা অস্থির। তাই ভিড় কম থাকলেও দায়িত্বে কোনো ঘাটতি রাখা হয়নি।
জানা গেছে, কক্সবাজারে নিবন্ধিত হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসের সংখ্যা প্রায় ৫০০। হোয়াইট অর্কিড হোটেলের মহাব্যবস্থাপক রিয়াদ ইফতেখার বলেন, ‘আগে যেখানে ছুটির সময় ৮০ শতাংশ রুম আগেই বুক হয়ে যেত, এবার তা নেমে এসেছে ৫০–৫৫ শতাংশে। এ অবস্থায় আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।’
সী নাইট হোটেলের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী বলেন, ‘কিছু তারকা হোটেলে ৮০–৯০ শতাংশ বুকিং হলেও বেশির ভাগ মাঝারি ও সাধারণ গেস্ট হাউস ও কটেজে তা ৫০–৬০ শতাংশেই সীমাবদ্ধ ছিল।’
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘আমরা ছুটির সময় বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সৈকত ও আশপাশে পুলিশ টহল ছিল। কোনো ধরনের সমস্যা হলে পর্যটকদের তথ্য কেন্দ্র কিংবা পুলিশ বক্সে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘কক্সবাজার শুধু দেশের নয়, আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন গন্তব্য হয়ে উঠুক, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সারা বছর পর্যটক রাখতে আমরা পর্যটন জোনজুড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ পর্যবেক্ষণ টিম চালু রেখেছি।’
এ বছর বৈশাখের প্রচণ্ড দাবদাহ, পরিকল্পনার ঘাটতি এবং আগাম প্রচারণার অভাবেই এই ছুটির বাজারে কক্সবাজার প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, আগামীতে বিকল্প গন্তব্য ও অফারভিত্তিক প্রচারণা চালালে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানো যাবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর