
কার্প ফ্যাটেনেটিং মাছ চাষে ভাগ্য বদলেছে জয়পুরহাট সদর উপজেলার আনোয়ার হোসেনের। কৃষিকাজের আয়ে সংসার চলছিল না তাই আত্মনির্ভরশীল হতে গড়ে তোলেন মাছের খামার।
শুরুটা কষ্টের হলেও আশা ছাড়েননি। এসময় জাকস থেকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ নেয়। দেরিতে হলেও পেয়েছেন সফলতাও। এখন তার অধীনে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক বেকার যুবকের। বেকার যুবকদের আত্মনির্ভরশীল গড়ে তুলতে পিকেএসএফ এর বিনামূল্যে অর্থায়নে জাকস ফাউন্ডেশন সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধলাহার সুন্দরপুর গ্রামের বশির উদ্দিনের ছেলে আনোয়ার হোসেন। সংসারের অভাবে লেখাপড়া হয়নি। এক যুগ আগে শুরু করেন চাষাবাদ ও ছোট মাছ চাষ। সেখানে আলোর মুখ দেখেননি। সেই আয়ে সংসার চলছিল না, তাই ভাবনায় ছিল অন্য কিছু করার। তাঁর পাশে দাঁড়ান জাকস ফাউন্ডেশন। সেখান থেকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ নেন আনোয়ার হোসেন।
এরপর পিকেএসএফের বিনামূল্যে অর্থায়নে জাকস ফাউন্ডেশনের কারিগরি ও সার্বিক সহযোগিতায় শুরু করেন কার্প ফ্যাটেনিং পদ্ধতিতে রুই, কাতলা, মৃগেৱ ব্রিগেড, ব্লাক কাপের পাবদাসহ দেশীয় মাছ চাষ। বর্তমানে তার ৫টি ৪০ বিঘার পুকুরে রয়েছে ৭০ লাখ টাকারও বেশী বিভিন্ন প্রজাতির ৭ কেজি থেকে ১৫ কেজি ওজনের মাছ।
এখন প্রতি মাসে আয় করছেন প্রায় অড়াই লাখ টাকা। তাকে দেখে অনেকেই শুরু করেছেন কার্প ফ্যাটেনিং পদ্ধতিতে মাছ চাষ। এক সময় আনোয়ারের নিজের চলাই কষ্ট ছিল, এখন তার অধীনে কাজ করে কর্মসংস্থান হয়েছে ৩০জন বেকার যুবকের। সংসারের কাজের ফাঁকে কাজ করে বাড়তি আয় করতে পেরে খুশি এলাকার শ্রমিকরা।
সফল মৎস্য চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, এক যুগ আগেও যার দিন কাটতো নানা কষ্টে। মাত্র দু লাখ টাকা নিয়ে ছোট পুকুরে মাছ চাষ করে লাভের চেয়ে লোকসান গুনতে হতো বেশী সময়। এভাবে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে কাটে ৮ বছর।
এসময় হঠাৎ করে তার পুকুর পারে হাজির হয় জাকস ফাউন্ডেশনের মৎস্য কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম সহ আরো কয়েকজন। বোঝানো হয় সনাতন পদ্ধতি ছেড়ে দিয়ে কীভাবে কার্প ফ্যাটেনিং পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে লাভের মুখ দেখা যায়। প্রথমে তাদের কথা আমার বিশ্বাস হয়নি। তারাও আমার হাল ছাড়েননি। এক সময় তাদের কথায় বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ নেয়। প্রশিক্ষণ শেষে বিনামূল্যে কিছু মাছ, খাবার ও উপকরণ। এরপর শুরু হয় সফলতার গল্প।
এক বছরে প্রকার ভেদে একটি মাছের ওজন ৭ কেজি থেকে ১৭ কেজি পর্যন্ত হয়। অল্প সময়ে স্বল্প খরচে উৎপাদন ও দাম ভাল থাকায় লাভের পরিমাণ বাড়তে থাকে। তিন বছরের ব্যবধানে এখন তার ৫টি পুকুরে প্রায় কোটি টাকার মাছ রয়েছে। সব কিছু বাদ দিয়ে এখন তাঁর বছরে আয় ৩০ লাখ টাকা। আর পিছনে তাকাতে হয়নি তাঁকে। কয়েক বছরের ব্যবধানে এখন নিজেই অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান করতে পেরে খুশি তিনি।
তার পুকুরে নিয়োজিত শ্রমিক রফিকুল ইসলাম, ফারুক হোসেন ও আশরাফুল ইসলাম বলেন, সংসারের পাশাপাশি আনোয়ার হোসেনের পুকুরে তারা ১০ হাজার টাকা মাসিক বেতনে কাজ করছেন। এরমধ্যে মাছের খাবার দেওয়ার সময় বড় বড় মাছগুলো একসাথে লাফালাফি করার সময় দেখতে খুব ভাল লাগে। আনোয়ারের মাছের খামারে তাদের মত আরও অনেকে কাজ করে তাঁরা খুশি।
একই এলাকার মৎস্য চাষী আব্দুল গাফফার বলেন, জাকস ফাউন্ডেশন থেকে আনোয়ার সহ কয়েকজন প্রশিক্ষণ নিয়ে কার্প ফ্যাটেনিং পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সফল উদ্যোক্তার খাতায় নাম লিখেছেন। জাকস ফাউন্ডেশনের এমন উদ্যোগ অব্যাহত রাখলে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে এবং কমবে বেকারত্ব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জাকস ফাউন্ডেশনের মৎস্য কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আনোয়ার হোসেনের মত জেলায় প্রায় দেড় শতাধিক বেকার যুবককে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এরকম যুবকদের খুঁজে বের করে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন পিকেএসএফের অর্থায়নে জাকস ফাউন্ডেশন।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে কাজ করছেন মৎস্য অধিদপ্তর।
সেইসাথে বেকারত্ব ঘুচিয়ে আনোয়ার হোসেনের মত মাছ চাষ করে আরও যুবকদের আত্মনির্ভরশীল গড়ে তুলেছেন জাকস ফাউন্ডেশন। এমন উদ্যোগে জেলার আরও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এমনটাই আশা প্রকাশ সকলের।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর