
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে গত বছরের আমন আবাদে পাহাড়ি ঢলের সৃষ্ট বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আর সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চলতি বোরো আবাদে ঝাঁপিয়ে পড়ে কৃষক। আবহাওয়া বেশ অনুকূলে থাকায় আবাদ খুব সুন্দর হয়েছে। সোনালি ধানে ভরে গেছে মাঠ। সামনের দিনে আর কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে কষ্টার্জিত সোনার ফসল ঘরে তুলতে পারবেন তারা। বর্তমানে উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকরা জানান এবারের বোরো আবাদে বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই তারা বেশ খুশি হয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১ লাখ ৮২ হাজার মেট্রিক টন ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ২৩ হাজার ১৩৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৪৩৩ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের ধান লাগানো হয়েছে। বর্তমানে উপজেলার এক পৌরসভা ও ১২ টি ইউনিয়নে ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে ইতোমধ্যে ১২ হাজার ৭২৩ হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। নির্বিঘ্নে কৃষকের সোনার ফসল ঘরে তুলতে সরকার কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করেছে। এতে কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে কৃষকদের নানা ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন।
কর্মকর্তারা জানান, প্রকৃতি নির্ভর এই আবাদে নালিতাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ফসলের মাঠে ৫০টি কম্বাইন হারভেষ্টার মেশিন কৃষকের ধান কর্তন করছে। মৌসুমের শেষ পর্যন্ত যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে কৃষক সুন্দরভাবে সোনার ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, বর্তমানে কৃষকরা ধান কর্তন ও মাড়াই কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে নালিতাবাড়ী উপজেলায় একরে গড় ফলন হয়েছে ৮৫ মণ (শুকনো ধান)। আর এই বাম্পার ফলনে কৃষকও খুব খুশি। তবে তারা ধানের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, কৃষক যাতে তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য তথা সরকার নির্ধারিত মূল্য পায় সেজন্য বাজার মনিটরিং করার ব্যবস্থা করতে হবে।
উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের আন্ধারুপাড়া গ্রামের কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, তিনি এক একর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ করেছিলেন। ইতোমধ্যে রোপিত ধান কর্তন করেছেন। তিনি একরে শুকনো ধান ৭০ মণ হারে ফলন পেয়েছেন। তিনি বলেন, ধানের ন্যায্য বাজার মূল্য না পেলে কৃষকের পোষাবে না। কেননা বোরো আবাদে অনেক খরচ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, নালিতাবাড়ীতে চলতি বোরো আবাদে ২৩ হাজার ১৩৩ হেক্টর জমিতে ধান রোপণের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার মেট্রিক টন ধান। বর্তমানে কর্তনকৃত ধানে গড় ফলন হয়েছে একরে ৭০ থেকে ৮০ মণ। বাকি দিনগুলোতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। তিনি বলেন, কৃষকের সোনার ফসল নির্বিঘ্নে ঘরে তুলতে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করেছে। তাই আমরা প্রতিদিন কৃষকের পাশে আছি। তাই কৃষি বিভাগ থেকে শতকরা ৮০ ভাগ ধান পাকলেই কৃষকদেরকে কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কৃষকদের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি ও ওজনে ঢলতা দেওয়ার ফাঁদ থেকে বাঁচাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর