
বেক সংসদ সদস্য সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগমের রিমান্ড শুনানি ঘিরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেন্দ্রিক রাজধানীর মিরপুর মডেল থানার একটি হত্যা মামলায় এ শিল্পীকে আদালতে হাজির করা হলে আইনজীবীদের মধ্যে বেশ হট্টগোল শুরু হয়। পরে আদালত তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি তার বক্তব্যে মমতাজের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং বিতর্কিত মন্তব্যগুলো তুলে ধরেন, যা এজলাসে হাসির রোল তোলে। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীকে খুঁজতে বেগ পাওয়া এবং রিমান্ডের মেয়াদ নিয়ে আইনজীবীদের অসন্তোষে আদালতকক্ষ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল মিয়ার আদালতে এসব ঘটনা ঘটে।
দুপুর ২টা ১৭ মিনিটে মমতাজকে আদালতে আনা হয়। পরে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয় তাকে। বিকেল ৩টা ৩ মিনিটে তাকে এজলাসে তোলা হয়। এসময় একসঙ্গে অনেক আইনজীবী সেখানে উপস্থিত হন, এতে আদালতে হট্টগোল তৈরি হয়। আদালতের অনুমতি নিয়ে উপস্থিত আইনজীবীদের শান্ত থাকার অনুরোধ করেন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।
উপস্থিত আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘শুনানির সময় কেউ পাশ থেকে কথা বলবেন না। এজলাসের ভেতরে কেউ ছবি তুলবেন না।’ আসামিপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এমন কিছু বলবেন না যেন অডিয়েন্সে (উপস্থিত শ্রোতা) বিশৃঙ্খলা হয়।’
বেলা ৩টা ৭ মিনিটে শুনানি শুরু হলে মমতাজের হেলমেট ও মাস্ক খোলা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম আদালতকে বলেন, ‘মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।’
এরপর মহানগর প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জাতি হিসেবে আবেগপ্রবণ। একজন ফুটবলার ভালো খেললে আমরা তার খেলাটাই দেখি। তাকে পছন্দ করার কারণ তিনি ভালো খেলেন। তেমনিভাবে নায়িকার অভিনয়, শিল্পীর ভালো গান আমরা পছন্দ করি। তারা কোন দল করে সেটা দেখা হয় না। তাদের কাজটাকে আমরা ভালোবাসি।’
‘তবে এই আসামি জনগণের ভালোবাসাটাকে ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছেন। আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব যখন আরেক রাষ্ট্রের কাছে জিম্মি; গুম, আয়নাঘর, আন্দোলন করলেই যখন গুলি করা হয়, তখন এই মমতাজ গানের ভালোবাসা দিয়ে ফ্যাসিস্টকে সহযোগিতা করে গেলেন। মানিকগঞ্জের সিংগাইরের মানুষের ভোট হরণ করলেন। সংসদের অধিবেশনে যেখানে মিনিটে কোটি টাকা খরচ হয় সেখানে তিনি গান গাইলেন— ‘আমার নেত্রী শেখ হাসিনা, সারা বিশ্বে নাই তার তুলনা।’ সংসদে তোফায়েল, আমুসহ অন্য সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতারা যেখানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে কটু কথা বলেননি, সেখানে তিনি বক্তব্য রাখলেন ‘খালেদার বাপের নাম কি?’
এই সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা ‘শেইম-শেইম’ বলে স্লোগান দেন।
শুনানির সময় জনাকীর্ণ এজলাসের কাঠগড়ায় পুরো সময় গালে হাত দিয়ে বিষণ্ন মনে পিপির বক্তব্য শুনতে দেখা যায় মমতাজকে। একপর্যায়ে পিপি আদালতকে বলেন, ‘এই আন্দোলনের সময় যখন হাসিনার মন খারাপ থাকত তখন তিনি হাসিনাকে গান শোনাতেন।’ এ সময় এজলাসে হাস্যরসের তৈরি হয়। পিপির বক্তব্য শুনে বিষণ্ণ মমতাজ নিজেও তখন হেসে দেন
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর