• ঢাকা
  • ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৩৯ মিনিট পূর্বে
জহুরুল ইসলাম
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১৫ মে, ২০২৫, ০৩:১৯ দুপুর

শাহজাদপুরে ফের যমুনায় ভাঙ্গণ; আতঙ্কিত চরবাসী

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে নতুন করে আবারও শুরু হয়েছে যমুনার ভাঙন। নদীর পূর্ব পাড়ে জেগে ওঠা চরে দীর্ঘদিন যাবত গড়ে ওঠা বসতির কয়েকটি গ্রাম ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ায় আতঙ্কিত চরবাসী।  

অপরদিকে সাড়ে ৬ কিলো ৬শ ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন যমুনার পশ্চিম তীর রক্ষা বাঁধের ১৫ নাম্বার সেক্টরে সিসি ব্লক ধসে যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে তীরবর্তী মানুষ। ঠিকাদারের গড়িমসি এবং পর্যাপ্ত ডাম্পিংয়ের অভাবে এমন ধস হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। আর এ ধসের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড তড়িঘড়ি করে ভাঙন এলাকায় ডাম্পিং শুরু করলেও আতঙ্ক কাটেনি নদী তীরের বাসিন্দাদের। 

জানা যায়, উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ৯টি গ্রামে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। গ্রামগুলি হল, কৈজুরি ইউনিয়নের চর ঠুটিয়া, সোনাতনী ইউনিয়নের মাকড়া, ধীতপুর, কুড়সি, বারপাখিয়া, বড় চামতারা, বানতিয়ার, গালা ইউনিয়নের বৃ-হাতকোড়া ও মোহনপুর। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এই ভয়াবহ ভাঙ্গণের তাণ্ডবে এ সব গ্রামের অধিকাংশ ফসলি জমি, বাড়িঘর, মসজিদ, মাদ্রাসা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। 

অবশিষ্টটুকুও বিলীনের পথে। গত ১ মাস আগেও যেখানে বাড়িঘর ছিল, এখন সেখানে অথৈ পানি। এখানকার জমিতে প্রচুর পরিমাণে পটল, বেগুন, ধান, বাদাম, মাষকালাই, বাঙ্গি, সবজি, ধনিয়া সহ সব ধরনের ফসল হয়ে থাকে।

এছাড়া এখানকার কৃষকেরা ষাঁড় গরু লালন পালন করে বাড়তি আয় করে। ফলে যমুনা নদী বেষ্টিত সোনাতনী ইউনিয়নের মানুষ আগের চেয়ে অনেক সচ্ছল হয়ে উঠেছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এখানে নতুন করে যমুনার ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। ফলে এ এলাকার অধিকাংশ ফসলি জমি ও বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে এখানকার কৃষকেরা নতুন করে ভাঙ্গণের কবলে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। 

এ বিষয়ে ধীতপুর গ্রামের ৭০ ঊর্ধ্ব কালু মোল্লা বলেন, এই চরে প্রচুর পরিমাণে পটল, বেগুন, ধান, বাদাম, মাষকলাই, বাঙ্গি, সবজি, ধনিয়া সহ সব ধরনের ফসল হয়ে থাকে। ৮৮ সাল থেকে এখানে ভাঙ্গা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ১১ ভাঙ্গা দিয়েছি। পটলসহ নানা ফসল বুনে ভালোই চলছিলাম। এখন বাড়িঘর ও ফসলি জমি সবকিছু নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখন অন্যের জমিতে ঘর তুলে থাকি। এ ঘরটিও ভাঙ্গণের কবলে পড়েছে। এ ভিটা ভেঙ্গে গেলে কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেবো, কি খাবো তা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছি। 

এ বিষয়ে ওই গ্রামের মনোয়ারা বেগম(৬৫) জানান, এ পর্যন্ত ১৪ বার তার বাড়িঘর ও ফসলি জমি যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আবারও তিনি ভাঙ্গণের কবলে পড়েছেন। এখন তার রাত কাটে ভাঙ্গণ আতঙ্কে।

এ বিষয়ে রজিনা খাতুন বালি বলেন, সোনাতনীর বালুমাটি সোনার মতই ছিল, এই বালু মাটিতে যা বুনেছি তাই ভালো জন্মেছে। শাকসবজি, তরুতরকারি শজপাতি বুনে আমাদের সংসার ভালোই চলছিল। এখন ভাঙ্গণের কবলে পড়ে সবকিছু নদীতে চলে যাচ্ছে। ফলে আমরা সবকিছু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এখন আমরা কোথায় যাবো, কি খাবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।

এ গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, গত এক বছরে সোনাতনী ইউনিয়নের শ্রীপুর থেকে বারোপাখিয়া পর্যন্ত ৫/৬টি গ্রামের প্রায় ৩/৪‘শ বাড়িঘর যমুনা নদীতে চলে গেছে। এই ভাঙ্গণরোধে এখানে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এ বিষয়ে ফজর আলী ব্যাপারী বলেন, ভাঙতে ভাঙতে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। চ্যাংরা থেকে বুড়া হয়ে গেলাম তবুও ভাঙ্গণরোধে কোনো সরকারই ব্যবস্থা নিল না। তিনি বলেন, বিগত সরকার আমলে স্থানীয় এমপির কাছে ভাঙ্গণরোধে ব্যবস্থা নিতে দরখাস্ত দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা তো এখন নাই। বিদায় নিয়েছে। এ সরকার যদি ব্যবস্থা নেয় তাহলে আমরা বাঁচবো। না হলে এ ভাবেই আস্তে আস্তে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে কুরসি গ্রামের মওলানা নজরুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদীর ভাঙ্গনে কুরসি গরুর হাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, বাড়িঘর ফসলি জমি সবকিছু বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই ভাঙ্গণ ঠেকাতে না পাড়লে মানুষজন অসহায় হয়ে পবে। ভাঙ্গণরোধে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এ ইউনিয়নটি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাবে। তাই সরকারের কাছে দাবি দ্রুত ভাঙ্গণরোধে ব্যবস্থা নিন।  

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেরিন আহমেদ বলেন, গত ৬ বছরে এ ৩টি ইউনিয়নের গ্রামগুলিতে কমপক্ষে ২৮০ হেক্টোর ফসলি জমি যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আবার এর বিপরীত পাশে ৯০ হেক্টোর বেশি জমি জেগে উঠেছে। ফলে এ ইউনিয়নে জমির পরিমাণ কমেনি। তবে যে সব ফসলি জমি নতুন করে ভেঙ্গে যাচ্ছে , সে সব জমির মালিক তাৎক্ষণিক ভাবে কিছুটা হলেও ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: কামরুজ্জামান বলেন, ভাঙ্গণ এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ভাঙ্গণরোধে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলে দ্রুত বস্তা ফেলার ব্যবস্থা করা হবে। 

মুনতাসির/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com