
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলি করে মানুষ হত্যার ঘটনায় সেই সময়কার পুলিশ কর্মকর্তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। আবার কারও বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধ আয়সহ বিভিন্ন অপরাধে দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এবার সেই তালিকায় সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়াও যুক্ত হয়েছেন। তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১৯ মে) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেন।
আবেদনে দুদক বলেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ও সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করতে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।
এখন যদি তিনি বিদেশে পালিয়ে যান তাহলে অভিযোগে উল্লিখিত বিভিন্ন দুর্নীতির রেকর্ডপত্র ও সম্পদের অনুসন্ধান ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিদেশ গমন রহিত করা একান্ত প্রয়োজন।
এর আগে, মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার চরম অপব্যবহারের অভিযোগ উঠায় অবসরে পাঠায় সরকার। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মাদ আবদুল মোমেনের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে তাকে অবসরে পাঠানো হয়।
বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডার ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী মিয়া ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট সিআইডি প্রধান হন। ক্ষমতার পালাবদলের মধ্যে সম্প্রতি তাকে ওই পদ থেকে সরানো হয়। পরে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হলো।
১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর পুলিশে যোগ দেওয়া মোহাম্মদ আলী মিয়া গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা। সিআইডি প্রধান হওয়ার আগে তিনি পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ডিআইজি, ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি, মানিকগঞ্জ ও হবিগঞ্জের জেলা পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্বে ছিলেন।
এসব পদে থাকাকালে মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগও কম ছিল না। তবে তৎকালীন সরকারের ‘ঘনিষ্ঠ’ কর্মকর্তা হিসেবে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আর সিআইডি প্রধান হিসেবে বসার পর ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করেন পুলিশের সাবেক এ কর্মকর্তা।
অভিযোগ রয়েছে, সিআইডি প্রধান থাকার সময় দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতায় নিজেকে অপ্রতিরোধ্য করেছিলেন মোহাম্মদ আলী মিয়া। প্রভাব খাটিয়ে সিআইডিতে তৈরি করেছিলেন নিজস্ব সিন্ডিকেট।
নিজের সেই সিন্ডিকেটে কিছু অধস্তন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যুক্ত করেন। কয়েকশ ভুয়া অভিযোগ এনে তদন্ত করার নামে সিআইডির এই সাবেক প্রধান অন্তত কয়েক হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন।
জানা গেছে, বিভিন্ন সময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সাধারণ পুলিশ সদস্যদের হেনস্থার বিষয়টি মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে জানালেও মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর