• ঢাকা
  • ঢাকা, সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১ মিনিট পূর্বে
মোঃ এস হোসেন আকাশ
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১৯ মে, ২০২৫, ১১:০৬ রাত

মনু মিয়াকে দেখতে যাবেন অভিনেতা খায়রুল

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

হাসপাতালে শয্যাশায়ী কবর খোদক মনু মিয়ার ঘোড়া হত্যার ঘটনাটিতে হতবাক নেটিজেনরা। অনেকে প্রকাশ করেছেন শোক। বিষয়টি নাড়িয়ে দেয় অভিনেতা খায়রুল বাসারকেও। 

মনু মিয়াকে ঘোড়া কিনে দেবেন জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টে মনু মিয়ার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা পোষণ করে যোগাযোগ করিয়ে দিতে নেটিজেনদের সহযোগিতা কামনা করেন। অতঃপর কবর খোদক মনু মিয়ার সঙ্গে কথা খায়রুল বাসারের। 

এরপর নিজের ফেসবুকে বিষয়টি জানিয়ে খায়রুল বাসার মনু মিয়ার সঙ্গে নিজের ফোনালাপের কিছু অংশ তুলে ধরেন। যে কথোপকথন হুবহু তুলে দেওয়া হলো। 

‘‘নাই বেডার নাই, আছে বেডারই যায় 
হেলো... কেডা?  
- আপনি মনু মিয়ার কে হন?
আরে ফাগল আমিই তো মনু মিয়া! 
ওনার কণ্ঠ ওনার বয়স অনুপাতে অনেক শক্ত। ওনার পুরনো শরীরের বিপরীতে ও নার মন আর কণ্ঠ অনেক বেশি দৃঢ় মনে হলো। 
ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম 
- কাকা কেমন আছেন? 
- আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ অনেক বালা রাকছে। তুমি কেডা? বাড়ি কই?  
- কাকা আমার বাড়ি কিশোরগঞ্জ।
কাকা বললেন, তাইলে তো তুমি আমার বাড়ির কাছই।
তারপর অনেক কথা শেষে বললাম - কাকা মন খারাপ কইরেন না, সব আল্লাহর ইচ্ছা, আল্লাহ আপনাকে দ্রুত সুস্থ করে দিবেন।আপনাকে সুন্দর একটা ঘোড়া দিবো আমরা। 
ধুরু.... তুমি আছো মন কারাফ লইয়া আর গুরা লইয়া! হুনো, নাই বেডার নাই , আছে বেডারই যায়। তোমার সাথে কথা কইয়া বালা লাগছে তুমি আইয়ো।
- আসতেছি...’’

এ প্রসঙ্গে খায়রুল বাসার বলেন, ‘সামাজিক মাধ্যমে লেখার পর সাংবাদিক ভাইদের অনেকে আমাকে মনু মিয়ার ফোন নাম্বার দিয়ে সহায়তা করেছেন। আমি ফোন করেছিলাম। প্রথমে চাচি (মনু মিয়ার স্ত্রী) কল ধরেছিলেন। পরে তিনি চাচাকে (মনু মিয়া) দেন। এরপর তার সঙ্গে কথা হয়। কথা বলে জানতে পারলাম ওনার সঙ্গে এরকম আগে থেকেই হয়ে আসছে। দেখি শুটিং সেরে রাতে দেখতে যেতে পারি।’ 

এর আগে মনু মিয়াকে দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে অভিনেতা লিখেছিলেন, ‘মনু মিয়াকে আমি ঘোড়া কিনে দিতে চাই। বিনিময়ে আমার কবর খোঁড়া পর্যন্ত আল্লাহ উনাকে বাঁচিয়ে রাখুন। কেউ যদি মনু মিয়ার সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন কৃতজ্ঞ থাকব।’

উল্লেখ্য, ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন বৃদ্ধ মনু মিয়া। বয়স ৬৭। শরীরে একাধিক রোগ বাসা বেধেছে। চোখে দৃষ্টি ঝাপসা, কিন্তু মন এখনও টানছে দূরের সেই গ্রামের দিকে। যেখানে কেউ মারা গেলে তিনিই প্রথম ছুটে যেতেন, হাতে কোদাল নিয়ে। কিন্তু কি করে ছুটে যাবেন? তিন দিন হলো তিনি জানেনেই না তার ছুটে চলার সাথী, জীবনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রাণী ঘোড়াটি আর বেঁচে নেই।

ঘোড়াটি তার বাহন ছিল না কেবল, ছিল একান্ত আপন। যে কথা বলত না, তবু যেন সব অনুভূতি বুঝত। সেই ঘোড়াটিকে অজ্ঞাত দুষ্কতিকারীরা বল্লম দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছে।

মনু মিয়া জানেন না… জানানো হয়নি। পরিবার চেপে গেছে সংবাদ। কারণ তারা জানে—এই খবর হয়ত মনু মিয়ার ক্ষয়ে যাওয়া শরীরের শেষ আশাটুকুও মুছে দিতে পারে।

প্রায় এক দশক আগে নিজের শেষ সম্বল, বাজারের একটি ছোট দোকান বিক্রি করে কিনেছিলেন একটি ঘোড়া। কারণ তখন পায়ে হেঁটে আর কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না। সেই ঘোড়াটিই হয়ে ওঠে তার সহচর—দিনের আলো হোক কিংবা রাতের অন্ধকার, মানুষের মৃত্যু সংবাদ পেলেই টগবগ টগবগ করে ছুটে যেতেন। হাতে কোদাল, কাঁধে ফাতিলা কাপড়। চোখে নির্ভীক নিষ্ঠা।

সেই প্রাণপ্রিয় সাথীটিই গত শুক্রবার সকালে ঘাস খেতে গিয়ে আর ফিরেনি। তিনি যতদিন ছিলেন সন্তানের মতো আগলে রাখতেন। কিন্তু তিনি অসুস্থ হয়ে সয্যাশায়ী হওয়ায়। ঘোড়াটির দেখভালের কেউ ছিল না। গত বৃহস্পতিবার (১৫ মে) পাশের হাশিমপুর গ্রামে ঘাস খেতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ঘোড়াটি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিথর দেহে পরিণত হয় মনু মিয়ার প্রিয় বাহনটি।

এলাকাবাসী হতবাক হয়ে পড়ে। মনু মিয়ার মতো তার ঘোড়াটিও ছিল ব্যাপক জনপ্রিয় সবার কাছে। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে কেউ কেউ কান্না আটকে রাখতে পারেনি। কেউ বলেছে, ‘মনু চাচার ঘোড়াটির মতো এমন প্রাণী আর আসবে না। আঘাত শুধু ঘোড়াটিকে করা হয়নি বরং মনু চাচাকে আঘাত করা হয়েছে। আঘাত করা হয়েছে মানবতাকে।’

ঘোড়ার মৃত্যুর খবর শুনে এলাকার কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার সকালেই ওই স্থানে ছুটে যান রিজন আহমেদ, তার ভাষ্যমতে, ঘোড়াটি যেখানে পড়ে আছে আশপাশের কিছু লোকের তোপের মুখে পড়ে আর ফেরতও আনতে পারেননি। তিনি জানান, এখনো ঘোড়ার নিথর দেহটি পড়ে আছে একটি জমিতে।

তারই এক প্রতিবেশী আলমগীর বলেন, ‘মনু চাচা এক পয়সাও নেন না কারও কাছ থেকে। মৃত্যুর সংবাদ শুনলেই চলে যেতেন। সেই মানুষটির ঘোড়াটিকে এভাবে হত্যা করা—এটা তো পশুহত্যা নয় শুধু, পুরো সমাজের বিবেকের মৃত্যু।’

মনু মিয়া হয়ত এখনও ভাবছেন—তার ঘোড়াটি উঠানে ঘাস খাচ্ছে। অথবা কারও জানাজায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। তিনি জানেন না, সেই ঘোড়াটি এখনও নিজের ‘শেষ ঠিকানা’ পায়নি। তার কবর এখনও খুঁড়ে দেওয়া হয়নি—কারণ অন্যের কবর খুঁড়তেন, তিনিই তো শুয়ে আছেন হাসপাতালের বিছানায়।

যদি সুস্থ হয়ে ফিরতে পারেন মনু মিয়া, হয়ত নিজ হাতে খনন করবেন তার প্রিয় সাথীর কবর। কোদালের প্রতিটি ঘায়ে হয়ত পড়বে এক ফোঁটা করে চোখের জল। মাটিতে চাপা পড়বে শুধু একটি দেহ নয়—একটি বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, আর ইতিহাস।

মিঠামইন থানার ওসি আলমগীর কবির দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘তদন্ত চলছে। খুব দ্রুতই আমরা অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনব।’

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com