
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অভিন্ন নীতিমালার জটিলতায় পদবঞ্চিত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ৬৯ জন শিক্ষক প্রভাষক পদ থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
মঙ্গলবার (২০ মে) পদোন্নতিপ্রাপ্ত শিক্ষকদের হাতে পদোন্নতির চিঠি তুলে দেন নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল।
বিভিন্ন বিভাগ থেকে পদোন্নতি পাওয়া শিক্ষকদের সংখ্যা যথাক্রমে এফটিএনএস ৭ জন, ইইই ৩ জন, ফিমস ২ জন, ইংরেজি ৪ জন, ইএসডিএম ৪ জন, আইসিই ৩ জন, বিজিই ৪ জন, অর্থনীতি ৫ জন, ফার্মেসি ৫ জন, অ্যাপ্লাইড ম্যাথ ৫ জন, কৃষি ২ জন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ৩ জন, আইআইটি ৫ জন, সমুদ্রবিজ্ঞান ৪ জন, বাংলা ১ জন, টিএইচএম ৩ জন, আইন ১ জন, সমাজবিজ্ঞান ১ জন, মাইক্রোবায়োলজি ৪ জন, পরিসংখ্যান ২ জন এবং রসায়ন বিভাগে ১ জন৷
জানা যায়, ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত ইউজিসির ১৪৬তম সভায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতিবিষয়ক এক অভিন্ন নীতিমালা গৃহীত হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে মন্ত্রণালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে ইউজিসির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রণীত এই অভিন্ন নীতিমালাটি নীতিগতভাবে গৃহীত হয়।
এই অভিন্ন নীতিমালায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হতে হলে হলে প্রার্থীর শিক্ষকতা যোগ্যতার পাশাপাশি তিন বছরের সক্রিয় শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যেখানে এর আগে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকলেই প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপককে পদোন্নতি পেতেন।
নোবিপ্রবি রেজিস্ট্রার দপ্তরের তথ্যমতে, এই জটিলতা মূলত তৈরি হয়েছে নোবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদারুল আলম থাকাকালীন সময়ে। তিনি শিক্ষকদের দাবির প্রেক্ষিতে এই নীতিমালা গ্রহণ না করার পক্ষে অবস্থান নিলেও পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেন। সিদ্ধান্তের তারিখের অসামঞ্জস্যতার কারণেই মূলত পদবঞ্চিত হতে হয় শিক্ষকদের।
এ বিষয়ে নোবিপ্রবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. তামজীদ হোসাইন চৌধুরি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নীতিমালার জটিলতায় ৮৪ জন শিক্ষকের পদোন্নতি আটকে ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নীতিমালায় প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য ২ বছর নির্ধারিত থাকলেও অভিন্ন নীতিমালায় তা ছিল ৩ বছর। এ কারণে পদোন্নতির প্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দেয়। অবশেষে রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্তে ৬৯ জনের পদোন্নতি চূড়ান্ত হয়। তবে এখনও কয়েকটি বিভাগের বোর্ড অনুমোদন না আসায় কিছু শিক্ষকের পদোন্নতির প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে।
তবে দীর্ঘদিন পর পদোন্নতি পেলেও উচ্ছ্বসিত পদোন্নতি পাওয়া শিক্ষকরা। বর্তমান প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রশাসনিক জটিলতা কাটিয়ে আমরা আমাদের প্রাপ্য পদোন্নতি পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের সদিচ্ছা ও কার্যকর উদ্যোগে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আমরা রিজেন্ট বোর্ডের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তারা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে আমাদের প্রাপ্য নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
ইএসডিএম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সজিব আহমেদ বলেন, প্রায় দেড় বছর পর আমরা পদোন্নতি পেয়েছি। এই দীর্ঘ সময় পর নানা জটিলতায় আমাদের পদোন্নতি আটকে ছিল। বর্তমান প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি তারা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে সমাধান করে দিয়েছে। আমাদের ক্ষতিপূরণও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে নোবিপ্রবি প্রশাসন।
এ বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল পদোন্নতিপ্রাপ্ত শিক্ষকদের শুভ কামনা জানান এবং ভবিষ্যৎ জীবনের সফলতা কামনা করেন। তিনি বলেন, অভিন্ন নীতিমালার যে জটিলতা ছিল তা সমাধান করা হয়েছে। নোবিপ্রবির নিয়োগ এবং পদোন্নতির বিষয়ে অভিন্ন নীতিমালা অনুসরণ করার বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই এ বিষয়ে আর কোনো জটিলতার অবকাশ নেই। পাশাপাশি পদোন্নতিপ্রাপ্ত শিক্ষকরা অধিকার হিসেবে তাদের প্রাপ্যতা পাবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর