
কোনো তদবির বা ঘুষ ছাড়াই মাত্র ১২০ টাকা খরচ করে শুধুমাত্র শারীরিক ও মেধাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে গাজীপুর জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন ৪৭ জন বেকার ছেলে-মেয়ে।
তাদের মধ্যে ৪১ জন ছেলে ও ৬ জন মেয়ে। অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন আরও ৯ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ইলেকট্রিক টেকনিশিয়ান, চা দোকানীও রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) সন্ধ্যায় গাজীপুর পুলিশ লাইন্সের ড্রিল শেডে শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন নিয়োগ কমিটির কমিটির চেয়ারম্যান ও গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো: যাবের সাদেক। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, নিয়োগ কমিটির সদস্য, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহেল রানা, গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) আমিনুল ইসলাম, গাজীপুর পুলিশ লাইন্সের আর ও আই মিজানুর রহমান, আর ও-১ এ কে এম আমিনুল ইসলাম।
ফলাফল ঘোষণার সময় পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী প্রায় সকল প্রার্থী ও অনেক অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সুপার বলেন, নিয়োগের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা ও ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক কোটা ছিল কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় একজন্র উত্তীর্ণ হয়নি। ফলে ৪৭ জন প্রার্থীই মেধার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়েছে। নিয়োগ যাতে স্বচ্ছ করা যায়, কেউ যাতে দালালের খপ্পরে না পরে সে জন্য গোয়েন্দা নজরদারি করা হয়। শতভাগ স্বচ্ছ, যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই ৪৭ জন প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত হয়েছে, তাদের মেডিকেল টেস্ট করা হবে। মেডিকেল টেস্টে যদি কেউ বাদ পড়ে, তার জন্য ৬ জনের একটি অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
ফলাফলে প্রথম হয়েছেন আমিলুল ইসলাম সাগর। তিনি গাজীপুর মহানগরী শিমুলতলী কলেজ গেট এলাকার মৃত আবু তাহেরের ছেলে। তার মা একজন গৃহিণী। তিনি বলেন, কোথাও কোন তদবির করতে হয়নি এবং মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত। পরিবারে আর কেউ উপার্জন সক্ষম ব্যক্তি নেই। তিনি পরিবারের অভাব দুর করার পাশাপাশি দেশ সেবা করতে চান।
গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকার বাসিন্দা রফিক শেখ। তার মেয়ে সিমেন আক্তার রিমি। এই নিয়োগে উত্তীর্ণ হয়েছে। শতভাগ স্বচ্ছভাবে নিয়োগ হওয়ায় তিনি খুবই খুশি। তিনি বলেন, তদন্তের জন্য যখন পুলিশ সদস্য তার বাড়িতে যায়, তাকে অনেক অনুরোধ করেও বাড়িতে এক গ্লাস পানি পান করাতে পারেননি।
ঋতু রানী দাস। কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নের টোক নয়ন বাজারের বাসিন্দা। তার পিতা-মাতা কেউ জীবিত নেই। তিনি বলেন, তার বাড়ির পাশে পুলিশ ক্যাম্প আছে। তাদের বাড়িতে যখন ফাড়ির কোন মহিলা পুলিশ আসত, তখন বাবা বলত- আমার মেয়েও যদি এ রকম পুলিশ হতো। তিনি স্বপ্ন দেখতেন তার মেয়ে পুলিশ হবে। ঋতু রানী কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, আজকে আমি পুলিশ হয়েছি, কিন্তু আমার বাবা দেখে যেতে পারল না।
তিনি আরো বলেন, আমি লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট ফেল করেছি ভেবে চলে গিয়েছিলাম। পরে আমাকে ফোন করে পাশের খবর জানালে আমি পুনরায় এসে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেই। তিনি বলেন, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হওয়ায় আমি নিয়োগ পেয়েছি।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ঢাকাশ্বর এলাকার মিস্ত্রি বিল্লাল হোসেনের ছেলে আবির হোসেন। তিনি নিজে ইলেক্ট্রিকের মিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার স্বপ্ন ছিল পুলিশের চাকরি করবে। বাবা-মা এবং সংসারের অভাব গোচাবে এবং দেশের সেবা করবে।
আরমান/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর