
নরসিংদীর পলাশ উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের কর্মকর্তা রিজা আক্তারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, খামখেয়ালিপনা, অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, পঙ্গু ভাতাসহ বিভিন্ন সরকারি সহায়তা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সেবা গ্রহিতাদের। দপ্তরের সামনে মাসের পর মাস ঘুরেও সেবা পাচ্ছে না সেবা প্রত্যাশীরা। এমনকি যথাযথ সেবা পেতে কারো কারো অপেক্ষা করতে হচ্ছে বছরের পর বছর।
ভুক্তভোগীর জানায়, ২০২৩ সালে জুলাই মাসে পলাশ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন রিজা আক্তার। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অফিসে আসা সেবা গ্রহিতাদের বিভিন্ন সময় হয়রানি ও অসদাচারণ করে আসছেন তিনি। সেবাপ্রত্যাশীদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, মাসের পর মাস ভাতা ভোগীদের ভাতা বন্ধ করে রাখার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যে কারণে মাসের পর মাস অফিসে ঘুরেও সেবা পাচ্ছেনা ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আছিয়া খাতুন জানান, রিজা মেম নিয়মিত অফিস করেন না, সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন অফিস করেন। এই সময়টুকু তো ও কেউ অফিসে আসলে তিনি দূর ব্যবহার, গালিগালাজ ও কুরুচিপূর্ণ আচরণ করেন। উনি কারো সাথে ভালো ব্যবহার করে না। অনেক প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক লোকজন আসলে উনি দূর-দূর করে অফিস থেকে তাড়িয়ে দেন। দুই পা পঙ্গু, ভুক্তভোগী আশাবুদ্দিন জানান, সেবা পাওয়ার বিষয়ে জানতে বোনের সাথে অফিসে গিয়েছিলাম, রিজা ম্যাডাম আমার সাথে খারাপ ও দুর্ব্যবহার করেছেন। আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি।
মোতালিব নামে একজন প্রতিবন্ধী ভুক্তভোগী জানান, ম্যাডাম আমাকে বলে- আপনি ভাতা পেলে আমার কি লাভ, এই বলে অফিস থেকে আমাকে বের করে দেন।
ভুক্তভোগী মিনতি রানী ও জোসনা রানী জানান, সমাজসেবা অফিসের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে আসলে, ম্যাডাম আমাদের সাথে বিভিন্ন রকম আজে- বাজে প্রশ্ন করে, দূর ব্যবহার ও খারাপ আচরণ করে। আমাদের কি আত্মসম্মান নাই?
চরসিন্দুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, উনি ভাতার টাকা ছাড় করাতে চান না। কারও ছয় মাসের ভাতা তিন মাস, আবার কার ও ভাতা মাসের পর মাস আটকিয়ে রাখেন। ব্যাংক থেকে তিনি ভাতার টাকা ছার করাতে চান না। আমার এলাকায় একজনের ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু এখন ও ভাতার টাকা পান না। বছরের পর বছর ঘুরছেন। জিজ্ঞেস করলে তিনি খারাপ আচরণ ও দুর্ব্যবহার করেন। সাধারণ জনগণ যে অভিযোগ করেছে তা সত্য। আমরা এর বিচার চাই।
আমার এলাকায় একজনকে ভাতা কার্ড করে দিয়েছেন তিন বছর হয়েছে। কিন্তু এখন ও ভাতার টাকা পান না। জিজ্ঞেস করলে তিনি খারাপ আচরণ ও দুর্ব্যবহার করেন। সাধারণ জনগণ যে অভিযোগ করেছে তা সত্য। আমরা এর বিচার চাই।
এদিকে সেবা প্রত্যাশীদের সাথে অসদাচরণের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সমাজ সেবা কর্মকর্তা রিজা আক্তার এসব অভিযোগ মিথ্যে ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল পরে সমাধান হয়ে গেছে।
সমাজ সেবা কর্মকর্তা রিজা আক্তারের এসব অনিয়ম ও অসদাচরণের প্রতিকার চেয়ে এরই মধ্যে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ পত্র দাখিল করে ভুক্তভোগীরা। এরই প্রেক্ষিতে অধিদপ্তরের আদেশে নরসিংদী জেলা সমাজ সেবা অফিস থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।
এ বিষয়ে জেলা সমাজ সেবা অফিসের সহকারী পরিচালক ও তদন্ত কমিটির প্রধান ও মোহাম্মদ নঈম জাহাঙ্গীর জানান,ভুক্তভোগীরা পলাশের সমাজসেবা কর্মকর্তা রিজা আক্তারের বিরুদ্ধে সমাজ সেবা মহাপরিচালক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন , বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন অতি শীঘ্রই অধিদপ্তরের প্রেরণ করা হবে।
এ বিষয়ে নরসিংদী জেলা সমাজ সেবা অফিসের উপপরিচালক মাসুদুল হাসান তাপস বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদন প্রভাবিত করার কোন সুযোগ নেই। তদন্তে তিনি যা পাবেন তা পাঠাবেন। এ দিকে সেবা গ্রহিতাদের এসব হয়রানি বন্ধসহ অভিযুক্ত কর্মকর্তার রিজা আক্তারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিবে কর্তৃপক্ষ এমনটাই আশা ভুক্তভোগীদের।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর