
ঈদুল আজহা সামনে। মুসলিম বিশ্বের অন্য প্রান্তে উৎসবের আমেজ শুরু হলেও গাজা উপত্যকায় উৎসব এখন শুধুই একটি দুর্লভ স্মৃতি। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই জনপদে এখন হাটে আছে হাতে গোনা কয়েকটি কোরবানির পশু—একটি গরু, একটি উট এবং অল্প কয়েকটি ভেড়া। তবে সেগুলোর দাম এতটাই বেশি যে, সেগুলো কিনে কোরবানি দেওয়ার মতো সাধ্য নেই সাধারণ মানুষের।
Associated Press (AP)-এর সর্বশেষ রিপোর্টে উঠে এসেছে, ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা ও অবরোধের কারণে গাজা উপত্যকার কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাত প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। খাদ্য ও কৃষি সংক্রান্ত স্থানীয় দপ্তরের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭ মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই সংকটে গাজায় ৯৬ শতাংশ গবাদিপশু এবং ৯৯ শতাংশ হাঁস-মুরগি ধ্বংস হয়ে গেছে।
ফলে গাজার হাটে এবার পশু তোলা কঠিন হয়ে পড়েছে খামারিদের জন্য। আর যারা তুলেছেন, তারা অতি উচ্চমূল্য দাবি করছেন—যার কারণে সাধারণ মানুষ তো দূরে থাক, অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও কোরবানির চিন্তা বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা সালেহ আল-আজহরি AP-কে বলেন, “ঈদ মানে ছিল হাসি, আত্মীয়দের সঙ্গে পশু কেনা, খুশি ভাগাভাগি। এখন ঈদের নাম শুনলে বুকের মধ্যে হাহাকার ওঠে। শুধু বেঁচে থাকার সংগ্রাম চলছে।”
গাজার খান ইউনুস, রাফাহ ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় মানুষের প্রধান খাদ্য এখন জাতিসংঘ ও দাতব্য সংস্থার দেওয়া ক্যানড খাবার। এমনকি ঈদের দিনের জন্য নতুন পোশাক জোগাড় করাও এখন বিলাসিতা।
একটি ভেড়ার দাম গাজায় বর্তমানে ১,২০০–১,৩০০ মার্কিন ডলার (প্রায় দেড় লক্ষ টাকা) পর্যন্ত উঠেছে, যেখানে গত বছর একই ভেড়া ২০০ ডলারের নিচে পাওয়া যেত। গরু কিংবা উট তো কল্পনার বাইরের বিষয় এখন।
গাজার একটি খামারের মালিক হামজা আবু মুহাম্মদ বলেন, “আমার খামারে আগে ৪০০ ভেড়া ছিল, এখন আছে মাত্র ১৭টি। যুদ্ধ, খাদ্য সংকট, ওষুধের অভাব—সব মিলিয়ে আমরা ধ্বংস হয়ে গেছি।”
গাজায় যুদ্ধের কারণে শুধু পশু নয়, খাদ্য, পানীয়, ওষুধ, আশ্রয়—সবকিছুরই তীব্র সংকট চলছে। শিশুদের হাসির বদলে কষ্টের কান্না, পরিবারের কোলজুড়ে ঈদের খুশি নয়—আছে শুধুই শোক ও শূন্যতা।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, গাজাবাসীর জন্য এই ঈদ কেবল একটি ধর্মীয় ইবাদত নয়—বরং সহনশীলতা, ধৈর্য ও মানবিকতার কঠিনতম পরীক্ষা।
সূত্র: Associated Press (AP), ২ জুন ২০২৫
সর্বশেষ খবর