
মৎস্য ভান্ডার খ্যাত সুন্দরবনে মাছের প্রজনন মৌসুম নির্বিঘ্ন করতে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসের জন্য সব ধরনের মাছ ধরা এবং পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল জেলে, বনজীবী ও পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বিপাকে পড়েছেন।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রাণী ও মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত ২৪ মে থেকে জেলে, মৌয়াল ও পর্যটকদের জন্য পারমিট দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাসানুর রহমান জানান, এই সময়ে আইন অমান্য করে কেউ প্রবেশ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় জেলেরা জানান, ২০১৯ সাল থেকে বন বিভাগ প্রতি বছর ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মাছ ধরা বন্ধ রাখে। ২০২২ সাল থেকে এই সময় আরও এক মাস বাড়ানো হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময় তাদের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়বে।
সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে জলভাগের পরিমাণ ১,৮৭৪.১ বর্গ কিলোমিটার। এখানে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মালাস্কা ও ১ প্রজাতির লবস্টারসহ প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে।
সুন্দরবন বিভাগ জানায়, ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান (আইআরএমপি) অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
মোংলা উপজেলার জেলে ইব্রাহীম শিকদার, রুস্তম আলী বয়াতী, আলী আকবরসহ অনেকে জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় তাদের পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হবে। তারা সমুদ্রের মৎস্য আহরণ বন্ধের সময়ের মতো সরকারের কাছে খাদ্য সহায়তা চেয়েছেন।
মোংলা উপজেলা জেলে সমিতির সভাপতি বিদ্যুৎ মন্ডল বলেন, জেলে পরিবারদের চাহিদা মিটিয়ে সহায়তা না করলে তারা চুরি করে সুন্দরবনে যেতে বাধ্য হবে। তাই সরকারকে প্রকৃত জেলে পরিবারদের আর্থিক সহায়তা বাড়াতে বা বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
সুন্দরবন ট্যুর অপারেটর এমাদুল জানান, পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত দুই হাজারের বেশি পরিবার অর্থ সংকটে পড়েছে। তিনি এই নিষেধাজ্ঞা এক মাসে নামিয়ে আনার দাবি জানান।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ জাহিদুল ইসলাম জানান, সুন্দরবনগামী জেলেদের বিষয়ে কাজ চলছে এবং শিগগিরই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনগামী নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। তবে অনিবন্ধিত জেলেসহ এই সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর