• ঢাকা
  • ঢাকা, সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৫ মিনিট পূর্বে
নিউজ ডেস্ক
বিডি২৪লাইভ, ঢাকা
প্রকাশিত : ২৩ জুন, ২০২৫, ০৬:৩৮ বিকাল

ভারতের অংশ হতে যাচ্ছিল দুবাই

ছবি: সংগৃহীত

১৯৫৬ সালের শীতকাল। দ্য টাইমস পত্রিকার সাংবাদিক ডেভিড হোল্ডেন তখন বাহরাইন দ্বীপে আসেন, যেটি তখনও ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ভূগোল শিক্ষক হিসেবে কাজের পর তিনি আরব দেশে কাজ করার সুযোগ পেয়ে খুশি হয়েছিলেন। তবে তিনি ভাবতেই পারেননি যে তাকে রানী ভিক্টোরিয়াকে ‘ভারতের সম্রাজ্ঞী’ ঘোষণার স্মরণে আয়োজিত একটি বৈঠকে যোগ দিতে হবে।

দুবাই, আবু ধাবি আর ওমানে ঘুরে হোল্ডেন বারবার ব্রিটিশ ভারতের ছাপ দেখতে পান। তিনি লেখেন, “এখানে এখনো রাজত্ব করে যেন পুরনো ব্রিটিশ ভারত। চাকরদের বলা হয় ‘বেয়ারা’, কাপড় কাচা লোককে ‘ধোবি’, পাহারাদারকে ‘চৌকিদার’। আর রোববারে অতিথিদের দেওয়া হয় বিশাল ঝাল-মশলাদার কারি লাঞ্চ, ঠিক আগের মতো।”

ওমানের সুলতান রাজস্থানে পড়াশোনা করায় উর্দুতে ছিলেন বেশি দক্ষ, আর ইয়েমেনের এক অঞ্চলের সৈন্যরা তখনো পুরনো হায়দরাবাদের সেনা পোশাকে চলাফেরা করতেন।

আডেনের গভর্নরের ভাষায়, “এখানে এসে মনে হয় যেন সময় থেমে গেছে ৭০ বছর আগে। তখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য তার চূড়ায়, রানী ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে, আর কিপলিং নতুন কিছুর কথা লিখছেন।”

আজ হয়তো আমরা ভুলে গেছি, কিন্তু বিশ শতকের শুরুর দিকে আরব উপদ্বীপের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই ব্রিটিশ ভারতের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

আডেন থেকে কুয়েত পর্যন্ত অনেকগুলো আরব অঞ্চল সরাসরি দিল্লি থেকে পরিচালিত হতো। ভারতীয় সৈন্যরা পাহারা দিত, প্রশাসনিক কাজ করত ভারতীয় কর্মকর্তারা, আর সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করত ভারতের ভাইসরয়।

১৮৮৯ সালের এক আইনে এই অঞ্চলগুলোকে ভারতেরই অংশ হিসেবে ধরা হতো। ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলোর তালিকায় ‘আবু ধাবি’ ছিল সবার আগে। ভাইসরয় লর্ড কার্জন বলেছিলেন, “ওমানকেও ভারতের রাজ্য হিসেবে ধরা উচিত, যেমন লাস বেইলা বা কেলাত।”

আডেন ছিল ভারতের পশ্চিম সীমান্তের বন্দর এবং বোম্বে প্রদেশের অধীনে পরিচালিত হতো। ১৯৩১ সালে গান্ধীজি সেখানে গেলে দেখেন, অনেক আরব যুবক নিজেদের ভারতীয় জাতীয়তাবাদী হিসেবে ভাবছেন।

তবে সেই সময় সাধারণ মানুষ জানতই না এই আরব অঞ্চল ভারতের অংশ। এই বিষয়টি গোপন রাখা হতো যাতে অটোমান বা সৌদি শাসকরা বিরক্ত না হন। একজন বক্তা বলেছিলেন, “যেমন কেউ তার প্রিয় স্ত্রীকে পর্দায় রাখে, তেমন ব্রিটিশরা আরব অঞ্চল সম্পর্কে সবকিছু ঢেকে রাখে, যেন কেউ জানতে না পারে আসলে কী হচ্ছে।”

১৯৩৭ সালে আডেনকে ভারতের প্রশাসন থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়। রাজা ষষ্ঠ জর্জ তখন এক বার্তা পাঠান, “আডেন ১০০ বছর ধরে ভারতীয় শাসনে ছিল। এখন এটি সরাসরি ব্রিটিশ কলোনি হিসেবে পরিচালিত হবে।”

তবে গালফ অঞ্চল তখনো ভারতের অধীনে থেকেই যায়। স্বাধীনতার সময় ব্রিটিশরা একবার ভাবেন—গালফের দায়িত্ব ভারত না পাকিস্তানকে দেওয়া যায় কি না। তবে দিল্লির কর্মকর্তারা জানান, গালফ নিয়ে ভারতের খুব একটা আগ্রহ নেই।

তাই ১৯৪৭ সালের ১ এপ্রিল গালফ অঞ্চলের রাজ্যগুলো ভারতের থেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে দেওয়া হয়। কয়েক মাস পর ভারত ও পাকিস্তান বিভক্ত হয়, আর এসব রাজ্যগুলো আর ফিরে তাকায়নি।

যদি সেই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত না হতো, তাহলে হয়তো আজকের দুবাই, কুয়েত কিংবা বাহরাইন ভারতেরই অংশ হতো, যেমন হায়দরাবাদ বা জয়পুর হয়েছিল।

তবে তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট অ্যাটলি যখন বললেন, ভারত থেকে যেমন ব্রিটেন চলে যাবে, তেমনি আরব থেকেও সরে যাবে—তখন তার কথা মেনে নেওয়া হয়নি। ফলে ব্রিটেন গালফে আরও ২৪ বছর থেকেছিল।

গবেষক পল রিচ একে বলেন, “এটি ছিল ব্রিটিশ ভারতের শেষ দখল, যেমন গোয়া ছিল পর্তুগিজ ভারতের শেষ জায়গা, বা পন্ডিচেরি ছিল ফরাসি ভারতের বাকি অংশ।”

তখনো গালফে ভারতীয় রুপি চালু ছিল, পরিবহন ব্যবস্থাও ‘ব্রিটিশ ইন্ডিয়া লাইন’-এর অধীনে, আর রাজ্যগুলো শাসন করতেন ভারতীয় রাজনীতিক পরিষেবায় অভ্যস্ত ব্রিটিশ কর্মকর্তারা।

১৯৭১ সালে ব্রিটেন গালফ ছেড়ে দেয়। সাংবাদিক ডেভিড হোল্ডেন তখন লেখেন, “গালফ এখন নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারবে। ব্রিটিশদের হস্তক্ষেপের ভয় নেই, সুরক্ষার ভরসাও নেই। এটি ছিল ব্রিটিশ রাজের শেষ ছায়া—যদিও অনেক ক্ষেত্রে সুন্দর, তবে এখন তার সময় শেষ।”

আজ গালফের অনেক দেশ যেমন বাহরাইন, কুয়েত বা দুবাই মনে রাখে ব্রিটিশদের শাসনকে, কিন্তু দিল্লি থেকে শাসিত হওয়াটাকে ভুলে গেছে। এই ভুলে যাওয়াটা ইচ্ছাকৃত, কারণ ‘পুরোনো স্বাধীনতা’র গল্প গালফের রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তবু সাধারণ মানুষের স্মৃতিতে রয়ে গেছে পুরোনো দিনের কথা।

২০০৯ সালে গবেষক পল রিচ একজন বৃদ্ধ কাতারিকে উদ্ধৃত করেন, যিনি ছোটবেলায় এক ভারতীয় কর্মচারীর কাছ থেকে কমলা চুরি করায় মার খেয়েছিলেন। কমলা তার আগে কখনো দেখেননি। তিনি বলেছিলেন, “আমার ছোটবেলায় ভারতীয়রা ছিল সবচেয়ে সুবিধাভোগী। আজ তারা আমাদের দেশে চাকরি করে—এটাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দ।”

আজকের ঝলমলে দুবাই একসময় ভারতের এক তুচ্ছ প্রশাসনিক অঞ্চল ছিল, যার নামও কেউ জানত না। আজকের দিনে যারা দুবাই বা কুয়েতে বসবাস করছেন—ভারত বা পাকিস্তান থেকে এসে—তাদের অনেকেই জানেন না, খুব সহজেই এই তেলসমৃদ্ধ রাজ্যগুলোও একসময় ভারতের অংশ হতে পারত।

কিন্তু সাম্রাজ্যের শেষ সময়ে একটি চুপিসারে নেওয়া প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত সেই ইতিহাসকে থামিয়ে দিয়েছে। আজ শুধুই তার ছায়া রয়ে গেছে।

সূত্র: বিবিসি

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com