
পাবনা: পাবনার ভাঙ্গুড়ায় নৈশপ্রহরী হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে সাতটি পরিবারের দশটি ঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। এতে পরিবারগুলো প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘরগুলো ভাঙচুর অবস্থায় পড়ে আছে। কিছু সিমেন্ট ও বাঁশের খুঁটি দাঁড়িয়ে আছে। পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন ভাঙা ঘরের বারান্দা জুড়ে। স্থানীয় একটি মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে সাতটি পরিবারের উপর এই হামলা চালানো হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, গত ১০ জুন সকালে স্থানীয় ১০-১২ জন লোক অতর্কিত হামলা চালায়। মারধর করে মহিলাদের বের করে দিয়ে একে একে সাতটি পরিবারের দশটি ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। পরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভানোর আগেই সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ৯ জুন রাতে চন্ডিপুর সিকেবি আলিম মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী ওসমান গণি মোল্লা (৬২) খুন হন। তিনি কাজীপাড়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শাহাদত হোসেন নামের একজনকে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। এরপর স্থানীয় সাইদুর রহমান মসজিদে মাইকিং করে শাহাদতের বাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার জন্য লোকজনকে আহ্বান জানান।
তবে, পরবর্তীতে পুলিশ ওসমান গণি হত্যায় জড়িত দুই কিশোরকে গ্রেপ্তার করে। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, মাদকের টাকার জন্য তারা বৃদ্ধকে খুন করেছে।
এদিকে, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত রবিউল করিম জানান, ঘটনার দিন তারা এক কাপড়ে বাড়ি থেকে কোনোমতে প্রাণ বাঁচালেও, আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এতে তাদের প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, "হত্যা করলো কে আর সন্দেহের বশে আমাদের এত বড় ক্ষতি করলো মানুষ, এখন এর দায়ভার কে নেবে?"
ক্ষতিগ্রস্ত লাইলী খাতুন বলেন, "আমার ছোট ভাইকে জড়িত সন্দেহ করে আমাদের উপর বর্বর হামলা করেছে। পরে তো ঠিকই আসল আসামি ধরা পড়লো। প্রমাণ হলো আমার ভাই জড়িত নয়। তাহলে এখন আমাদের কি হবে? কে দেবে এই ক্ষতিপূরণ?"
নুরুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা খাতুন জানান, তারা এখন বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে এক রাত করে কাটাচ্ছেন। দিনের বেলায় এসে ভাঙা ঘরের সামনে বসে থাকেন।
ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, নৈশপ্রহরী ওসমান গণি হত্যার মূল দুই আসামি হাবিব ও আহমদ উল্লাহকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় সাইদুর রহমানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের শুকনো খাবার, টিন ও নগদ ৬ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন।
যোগাযোগের জন্য রবিউল করিমের মোবাইল নম্বর: ০১৭৩৬-৬৭৭২১০।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর