
কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ইউটিউব থেকে হুবহু নকল করে তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্রের শিক্ষক মোঃ হাসমত আলী এই প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন। তবে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিষয়টি জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, এর আগেও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে এই বিদ্যালয়টি সমালোচিত হয়েছে।
জানা যায়, গত ২৪ জুন থেকে সারা দেশে উচ্চ বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রশ্নপত্রের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করে প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশ্নপত্র তৈরি করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু তালবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্রটি গত ১০ জুন ‘এফ এইচ পিসি’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা একটি ভিডিও থেকে হুবহু নকল করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক হাসমত আলী বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতেন এবং পরীক্ষার আগের দিন ৫০০-১০০০ টাকার বিনিময়ে তাদের মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্রের ইউটিউব লিংক দিতেন।
সংবাদ সংগ্রহকালে তিনজন সাংবাদিককে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্ত শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করেন। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদ শিক্ষকদের সাথে বিষয়টি ম্যানেজ করার কথা বলেন এবং বহিরাগত বখাটেদের ডেকে সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন।
এর আগে, গত দুই মাস আগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দারকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। শিক্ষকরা বহিরাগতদের ডেকে এনে তাকে তার অফিস কক্ষে তালাবদ্ধ করে রেখে আন্দোলন করেন।
নবম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী জানায়, তারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে কিছু জানে না।
শিক্ষার্থীর এক অভিভাবক বলেন, পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গেলে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং তিনি এর সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।
অভিযুক্ত শিক্ষক মোঃ হাসমত আলী বলেন, অনেক সময় কাকতালীয়ভাবে প্রশ্ন মিলে যেতে পারে। নতুন হিসেবে তিনি এটি করেছেন এবং হুবহু মিলে যাওয়াকে তিনি নিজের জন্য অন্যায় মনে করছেন।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আজিজুর রহমান জানান, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন এবং ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি রোধে সতর্ক থাকবেন।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনিও বিষয়টি দেখেছেন এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন না হয়, তা নিশ্চিত করবেন।
মিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ নাজমুল ইসলাম জানান, সরেজমিনে তদন্ত করে প্রশ্নপত্রের সাথে ইউটিউবে প্রকাশিত প্রশ্নপত্রের মিল পাওয়া গেছে। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
কুষ্টিয়া জেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার মুন্সি কামরুজ্জামান জানান, সরকারিভাবে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কোনো উৎস থেকে প্রশ্ন নেওয়া যাবে না। নিজেদের তৈরি করা প্রশ্নে পরীক্ষা নিতে হবে। যদি শিক্ষকরা এই বিধি ভঙ্গ করেন এবং হুবহু প্রশ্ন নকল করেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর