
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখা আজ শনিবার (২৮ জুন) স্থানীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সম্মেলনে পিসিসিপি ৪ দফা দাবি পেশ করে।
দাবিগুলো হলো: ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন ২০১০ সংশোধন করে ‘জাতি বৈচিত্র্য ইনস্টিটিউট অধ্যাদেশ ২০২৫’ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত বাতিল করা; প্রতিষ্ঠানের ৬ জন সদস্যের সবাইকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী থেকে মনোনয়নের সিদ্ধান্ত সংবিধান পরিপন্থী হওয়ায় তা বাতিল করা; উপদেষ্টা মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী ও সুপ্রদীপ চাকমার বিতর্কিত ভূমিকার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দে সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের নিরপেক্ষ তদন্ত করে পুনর্বিন্যাস নিশ্চিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পিসিসিপি’র খাগড়াছড়ি শাখার সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, "গত ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ও সমতাভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্ন নিয়ে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমাদের নতুন সরকারের প্রতি পার্বত্যবাসীর আশাবাদ ছিল, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্যমান বৈষম্য, সংবিধানবিরোধী প্রবণতা ও একচেটিয়া সিদ্ধান্তের অবসান হবে। কিন্তু উদ্বেগের সাথে আমরা লক্ষ্য করছি, বর্তমান সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ার অন্তরালে কয়েকজন উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয় এমন সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা একদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জনগোষ্ঠীকে আরও বেশি প্রান্তিক করে তুলছে। অন্যদিকে অঞ্চলটির অখণ্ডতা এবং সাংবিধানিক কাঠামোকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।"
মুজাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, গত ২৩ জুন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় "ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০" সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়। ওই সভায় উপদেষ্টা মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী জানান, প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম পরিবর্তন করে "জাতি বৈচিত্র্য ইনস্টিটিউট" রাখা হবে। এছাড়া প্রস্তাবিত ২০২৫ সালের অধ্যাদেশের ৭(ঘ) ধারায় পূর্ববর্তী আইনের পরিবর্তন এনে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ৬ জন সদস্যের সবাইকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। যেখানে পূর্বে ৬ জনের মধ্যে ৪ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হতে পারতেন।
তিনি এই সিদ্ধান্তকে সংবিধান পরিপন্থী ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিয়ে বলেন, এই আইনের মাধ্যমে 'ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী' শব্দটিকে চাপা দিয়ে 'নৃ-বৈচিত্র্য' বা 'জাতি বৈচিত্র্য' শব্দচয়ন চালু করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আদিবাসী স্বীকৃতির কৌশলগত ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। একইসঙ্গে বাঙালি জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অংশগ্রহণকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বঞ্চিত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মজিদ, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, পিসিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান, তারিকুল ইসলাম রায়হান, সাইদুর রহমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সর্বশেষ খবর