
টানা ১২ দিনের তীব্র সংঘাতের পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে বর্তমানে যুদ্ধবিরতি চলছে। সাম্প্রতিক এই সংঘাতকে অন্যতম ভয়াবহ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে, যেখানে ইসরায়েলের হামলায় ৭০০-এর বেশি ইরানি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানসহ অন্তত ২৪ জন শীর্ষ কমান্ডার এবং ১৪ জন পরমাণু বিজ্ঞানীও রয়েছেন। ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকেও।
সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর নিরাপত্তার কারণে আত্মগোপনে চলে যান খামেনি। তবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও তার জনসমক্ষে অনুপস্থিতি নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়, বিশেষ করে মহররমের অনুষ্ঠানেও তাকে দেখা না যাওয়ায় এই শঙ্কা আরও বাড়ে। তার স্বাস্থ্য, অবস্থান বা মৃত্যু নিয়ে পুরো ইরান এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছিল।
অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ ২৬ দিন পর জনসমক্ষে এলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। পবিত্র আশুরার আগের দিন, শনিবার (৫ জুলাই), তেহরানের একটি মসজিদে আয়োজিত এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তাকে দেখা গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ৬ জুলাই (রবিবার) এই তথ্য জানিয়েছে।
১৩ জুন ইরান-ইসরায়েল সাম্প্রতিক যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে ইরানের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন, যার প্রতিক্রিয়ায় ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালায়। ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার পর শুরু হওয়া এই ১২ দিনের যুদ্ধে খামেনিকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। তিনি কেবলমাত্র তিনটি ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন। খবর ছড়িয়ে পড়েছিল যে তিনি একটি গোপন বাংকারে লুকিয়ে আছেন। তবে সংঘাত থামার পরও তাকে দেখা না যাওয়ায় সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।
শনিবার খামেনির সরাসরি উপস্থিতি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয় এবং টেলিভিশনে তাকে দেখে সমর্থকদের আবেগঘন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে দেখা যায়। ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রবীণ শিয়া ধর্মীয় নেতা মাহমুদ কারিমিকে তিনি অনুরোধ করছেন দেশাত্মবোধক গান “ও ইরান” পরিবেশন করতে, যা সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই অনুষ্ঠানটি তেহরানের ইমাম খোমেইনি মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়, যা ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতার নামে নামকরণ করা হয়েছে।
খামেনির এই উপস্থিতি এমন এক সময়ে হলো, যখন ইরানসহ গোটা শিয়া বিশ্ব মহররম মাসের শোক পালন করছে। মহররমের দশম দিন পবিত্র আশুরা, যেদিন মুসলিমরা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসেইনের শাহাদত স্মরণ করেন।
এর আগে, গত ২৬ জুন খামেনি রাষ্ট্রীয় টিভিতে এক রেকর্ড করা বার্তায় বলেন, ইরান কখনোই ইসরায়েলের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না, যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই আহ্বান জানিয়েছেন। মূলত, ২২ জুন ইসরায়েলের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে যোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনায় (ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান) হামলা চালায়। এই অভিযানে ১২৫টি মার্কিন সামরিক বিমান অংশ নেয়।
১২ দিনের এই যুদ্ধে ৯০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে ইরানের বিচার বিভাগ জানিয়েছে।
সর্বশেষ খবর