
কৃষিখাতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কীটনাশকের ব্যাপক ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার খাদ্যশস্যে বিপজ্জনক রাসায়নিক অবশিষ্টাংশের সৃষ্টি করছে, যা ক্যান্সার, কিডনি রোগ, হরমোনজনিত জটিলতা ও প্রজনন সমস্যাসহ নানা রোগের কারণ হতে পারে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবিলম্বে কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতির দিকে যেতে হবে।
বাকৃবির কৃষি অনুষদের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান মঞ্জিল জানান, দেশে ব্যবহৃত বালাইনাশকের মধ্যে ছত্রাকনাশকের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৪৬ শতাংশ। কীটনাশক ৩৩ শতাংশ এবং আগাছানাশক ২০ থেকে ২১ শতাংশ ব্যবহৃত হয়। তিনি বলেন, কৃষকরা না বুঝেই সবজি চাষে অতিরিক্ত বালাইনাশক ব্যবহার করেন। ফলে ৩০ শতাংশ সবজিতে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়। এর মধ্যে শসাতে ৫০ শতাংশ, টমেটোতে ৪০ শতাংশ, বেগুন ও ফুলকপিতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ এবং বাঁধাকপিতে ১৫ থেকে ২০ শতাংশে এই রাসায়নিক অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে।
ড. মঞ্জিল আরও বলেন, বালাইনাশক শুধু গাছে নয়, মাটিতেও মেশে এবং বৃষ্টির পানিতে তা ভূগর্ভস্থ পানি, পুকুর, নালা ও খালের পানি দূষিত করে। এর ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায় এবং জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। মৌমাছিসহ অন্যান্য উপকারী পোকামাকড়ও মারা যায়।
ভেটেরিনারি অনুষদের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গবাদি পশু সরাসরি বা পরোক্ষভাবে বালাইনাশকের সংস্পর্শে আসে। ঘাস, শাকসবজি ও ফলমূলের মাধ্যমে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ পশুর শরীরে প্রবেশ করে। দীর্ঘদিন ধরে পশুদের শরীরে বালাইনাশক প্রবেশ করলে কিডনি ও লিভারের ক্ষতি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস এবং প্রজনন ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, কীটনাশক মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণের ফলে গরু, ছাগল বা অন্যান্য প্রাণীর দুধ ও মাংসে ক্ষতিকর রাসায়নিক জমা হয়, যা মানবদেহে প্রবেশ করে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বিশেষজ্ঞরা বালাইনাশকের বিকল্প হিসেবে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার (আইপিএম) ওপর জোর দিয়েছেন। তারা বলেন, জৈব বালাইনাশক ‘ট্রাইকোডারমা’ ব্যবহার করে রাসায়নিক বালাইনাশকের ব্যবহার অর্ধেক পর্যন্ত কমানো সম্ভব। এছাড়া, ফসলের বৈচিত্র্য আনা এবং জমিতে একই ফসল বারবার চাষ না করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
গত ২৮ জুন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক এক সম্মেলনে বিষাক্ত কীটনাশক বন্ধ করতে প্রয়োজনে রাস্তায় নামার ঘোষণা দেন। তিনি বিষ দিয়ে মাছ ধরা ও ঘাসে আগাছানাশক ব্যবহারের তীব্র সমালোচনা করেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকার ভর্তুকি দিলে জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার বাড়বে এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা গেলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষা পাবে।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর