
টানা ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে ফেনীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত তিন দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ১৭টি স্থানে ভাঙন ধরেছে। এতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা দুটিতে বিদ্যুৎ না থাকায় ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ বন্ধ রয়েছে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় (বুধবার বিকাল ৫টা ৫১ মিনিট পর্যন্ত) ফেনীতে ৫৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ফেনী ও আশপাশের এলাকায় মাঝারি থেকে অতি ভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ৭ জুলাই সকাল ৯টা থেকে ৯ জুলাই সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় ফেনীতে ৫৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বন্যার পানিতে মানুষের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বীজতলা, কৃষি জমি, মাছের ঘেরসহ বিভিন্ন স্থাপনা তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কের কিছু অংশ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেককে হাঁটু পানি দিয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
পরশুরাম গেজ স্টেশনে ৮ জুলাই রাত আটটায় মুহুরী নদীর পানির স্তর ছিল ১৩.৮৫ মিটার, যা বিপদসীমার (১২.৫৫ মিটার) ১.৩০ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী নদীর ডান তীরে জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশ-ভারত সীমানা বাঁধের সংযোগস্থল দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বুধবার দুপুর বারোটায় মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে পানিবন্দি এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসমাইল হোসেন জানান, ফুলগাজী, পরশুরাম ও ফেনী সদর উপজেলার আংশিক এলাকা বন্যা কবলিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন বন্যা মোকাবেলায় তৎপর রয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ শাখার সমন্বয়ে একাধিক দল কাজ করছে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বুধবার দুপুর পর্যন্ত তিন উপজেলার প্রায় ১১ হাজার ৫০০ মানুষ দুর্যোগ কবলিত হয়েছেন। ১১৫টি পরিবারের ৩৪৭ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক নজরদারি রাখা হচ্ছে। বন্যা কবলিত পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় চারশ প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী, দাগনভূঞা ও ফেনী সদর উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর জন্য ১২০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলার ছয় উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নগদ ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর