
রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও সীমান্ত পরিস্থিতি ঘিরে ক্রমবর্ধমান অপরাধ এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। গতকাল কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের সমন্বয় সভায় প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা মাদক, চাঁদাবাজি ও গণপিটুনির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেন। তারা বলেন, অপরাধী যত প্রভাবশালীই হোক, রাজনৈতিক পরিচয়ে আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর স্বরাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক কক্সবাজারের বিয়াম ফাউন্ডেশন আঞ্চলিক কেন্দ্রে এই সভায় সরকারের কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।
সভা শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “মাদক কারবারি কিংবা চাঁদাবাজ যেই হোক না কেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল।”
তিনি আরও বলেন, মাদক এখন সীমান্ত পেরিয়ে সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রবেশ করেছে। কক্সবাজার মাদকের প্রধান প্রবেশদ্বার হওয়ায়, সীমান্তসহ জেলা ও ক্যাম্পভিত্তিক অভিযান জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চাঁদাবাজদের রাজনৈতিক ছত্রছায়ার বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, চাঁদাবাজের একটাই পরিচয়—সে চাঁদাবাজ। তার রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
গণপিটুনির ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে চাইলে, তাকে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। তবে এই সংকট শুধু বাংলাদেশের একার নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয় ও দায়িত্বশীল হতে হবে। সহায়তা কমে গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকার অবগত এবং দ্রুতই বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এর আগে দুই উপদেষ্টা উখিয়ার ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।
পরিদর্শনকালে কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে ১৪ লাখের বেশি নিবন্ধিত রোহিঙ্গা রয়েছে। গত আট বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
সভায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, এপিবিএন, আনসার এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প, সীমান্ত ও জেলাব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জাতীয় এর সর্বশেষ খবর