
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক লামিয়া ইসলাম। সাহসী নেতৃত্ব, ত্যাগ ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় এই তরুণী এখন নতুন প্রজন্মের অনুপ্রেরণার নাম। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের আলো-কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেন আন্দোলনের সময়কার অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ, আত্মত্যাগ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা।
রাজনীতিতে আসার পেছনে স্বপ্ন ও বাস্তবতা নিয়ে লামিয়া ইসলাম বলেন, রাজনীতিতে এসেছি রাষ্ট্র ও শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের স্বপ্ন নিয়ে। কেউ এসে এ দেশটাকে বদলে দেবে না-এই চেতনায় আমরা এগিয়ে চলেছি। দেশে শোষণের বৈধতা যেন সাংবিধানিকভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকার আজ জনগণের সেবক নয়, বরং শোষক। তাই আমরা জনগণের রাষ্ট্র গড়ার সংগ্রামে নেমেছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা যখন রাজনীতিতে আসি, তখন দেশে চূড়ান্ত ফ্যাসিবাদের সময় চলছিল। নিজের অধিকারের পক্ষে কথা বললেও হেনস্তা হতে হতো। তবুও পিছু হটিনি।
আন্দোলনের মঞ্চে তিনি ছিলেন একজন নববধূ, বিয়ের ঠিক দুইদিন পর আবার রাজপথে ফিরে যান লামিয়া ইসলাম। ১২ জুলাই আমার বিয়ে হয়। তার আগেও শপিং ব্যাগ হাতে মিছিলে অংশ নিয়েছি। বিয়ের দুই দিন বাদেই আন্দোলনে ফিরে যাই। তখন শ্বশুরবাড়ি থেকে মিথ্যা অজুহাতে বের হতাম। বরের সহযোগিতা পেয়েছি। তখনও হাতে মেহেদি ছিল, কিন্তু আমি প্ল্যাকার্ড ধরেছি, টিয়ারশেল খেয়েছি। মুক্তির নেশা মানুষকে সব ভয় থেকে মুক্ত করে দেয়।”
তিনি বলেন, বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ফোনে ফ্ল্যাশ দিয়ে বের হতাম। সঙ্গে কাগজে নিজের নাম, মায়ের ও স্বামীর ফোন নম্বর লিখে নিতাম-যদি আর ফেরত না আসি।
ভুলে যাওয়া যায় না ২ আগস্টের শাহবাগ, ২ আগস্ট শাহবাগে সংঘর্ষে জড়াই। গুলি চলছিল, সামনে দুইজন রাস্তায় পড়ে যান। সেই দৃশ্য আজও চোখে ভাসে। চোখের সামনে মৃত্যু দেখে ফেলেছি। এসব ভুলে থাকা যায় না।
‘গণঅভ্যুত্থান আসলে জনগণের আবেগের বিস্ফোরণ’ জুলাই আন্দোলন সম্পর্কে লামিয়া বলেন, এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ ক্ষোভের বিস্ফোরণ ছিল। আমরা শুধু মাঠে ছিলাম—মানুষ নিজে থেকেই রাস্তায় নেমে আসে। ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের নিপীড়ন মানুষকে এক করে দেয়। কেউ সাহস করে রুখে দাঁড়ালে, দেখেছি হাজারো মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছে।
ভবিষ্যতের স্বপ্ন-একটি জনগণের রাষ্ট্র:আমরা এমন রাষ্ট্র চাই যেখানে সরকার আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে না, ক্ষমতা কোনো একক গোষ্ঠীর হাতে থাকবে না। নারীবান্ধব, জবাবদিহিমূলক, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসম্পন্ন রাষ্ট্র গড়াই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, আমরা চাই এমন আইন, যেখানে জনগণ সবসময় রাষ্ট্রের উপর নজর রাখতে পারে। কর আদায় করতে হলে জনগণের সেবাও নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্র হবে নাগরিকবান্ধব, ক্যাডারনির্ভর নয়।
পরবর্তী চ্যালেঞ্জ: সংবিধান সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা: গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা পরিবর্তনের আশা করেছি। পুরোনো ব্যবস্থার আমূল সংস্কার দরকার। আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা, জুলাই সনদ ঘোষণা, সংবিধান ও আইনি কাঠামোর সংস্কার, ফ্যাসিবাদের শিকড় উৎপাটন—এগুলো এখন সময়ের দাবি।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর
অন্যান্য... এর সর্বশেষ খবর