
গাজা উপত্যকায় চরম খাদ্য সংকটের মধ্যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা। ইউনাইটেড নেশনের (UN) সহায়তায় পরিচালিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (IPC) মঙ্গলবার জানিয়েছে, গাজায় "দুর্ভিক্ষের সর্বোচ্চ আশঙ্কাজনক পর্যায়" শুরু হয়েছে।
খাদ্যের সংকটে গাজার লাখো মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। শহরের তিনজন শিশুর মধ্যে একজন চরম অপুষ্টিতে ভুগছে, যা দুর্ভিক্ষের প্রধান সূচক হিসেবে বিবেচিত। এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে গাজার অন্তত ৫০ শতাংশ পরিবার পর্যাপ্ত খাবার পায়নি। উত্তর গাজায় এ হার আরও বেশি—জুলাইয়ে সেখানে ৮১ শতাংশ পরিবার চরম খাদ্য সংকটে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজায় বর্তমানে দুই মিলিয়নের বেশি মানুষ সরাসরি ক্ষুধা ও অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। জুলাই মাসে অন্তত ২০ হাজার শিশু অপুষ্টিজনিত চিকিৎসা পেয়েছে। শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) ও ইউনিসেফ (UNICEF)।
মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা এবং পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ ব্যর্থ হওয়ার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে। ইসরায়েল কিছু সহায়তা ঢুকতে দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ অবস্থাকে ‘গভীর মানবিক বিপর্যয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
অপরদিকে ইসরায়েল সরকার গাজায় দুর্ভিক্ষের অস্তিত্ব অস্বীকার করে আসছে। তবে আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজায় শিশুদের খাদ্য সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “টিভিতে দেখা শিশুদের মুখে যে ক্ষুধা ফুটে উঠেছে, তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।”
গাজায় এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা না করা হলেও দুইটি প্রধান সূচক—চরম খাদ্য সংকট ও শিশুদের অপুষ্টি—ইতোমধ্যে পূরণ হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে হাজার হাজার মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়বে। ইতোমধ্যে সেখানে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবিলম্বে সীমান্ত খুলে দিয়ে খাদ্য সহায়তা প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি এবং নিরাপদ সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যথায় গাজায় দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ পরিণতি আরও বিস্তৃত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সর্বশেষ খবর