
দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকবাহী হাউজবোটগুলো থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেলেও সুনামগঞ্জের ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম। তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও মধ্যনগর উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওরে সারা বছরই পর্যটকদের আনাগোনা থাকে। এছাড়া তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষে শহীদ সিরাজ লেক (কয়লা কোয়ারি), জাদুকাটা নদী, শিমুল বাগানসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট দাপিয়ে বেড়ানো ৬ শতাধিক আধুনিক ও অত্যাধুনিক হাউজবোট থেকে গত ১০ বছর ধরে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।
অথচ দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে থাকা হাউজবোটগুলো থেকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিচ্ছেন দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাহিরপুর উপজেলায় দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ রাজস্ব আদায় না করায় সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দারা জানান, ওইসব হাউজবোট ও নৌযানগুলো টাঙ্গুয়ার হাওরের সংরক্ষিত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নীতিমালা লঙ্ঘন করে চলছে। তারা প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দিলেও তা মানছে না, ওইসব হাউজবোট, নৌযান ও আগত পর্যটকদের নীতিমালা মেনে চলার জন্য কঠোর নজরদারির সাথে সাথে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলা ও তাহিরপুর উপজেলায় ৬ শতাধিক বিলাসবহুল হাউজবোট ও নৌযান রয়েছে। এর মধ্যে তাহিরপুর উপজেলায় তিন শতাধিক হাউজবোটের নিবন্ধন রয়েছে, বাকিগুলো জেলা সদরে। এছাড়া বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর, ধর্মপাশা উপজেলাতেও রয়েছে বেশ কিছু হাউজবোট। আগত পর্যটকদের কাছ থেকে প্যাকেজে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকার বেশি নিচ্ছে। প্রতি ট্রিপে ৩০-৪০ জন পর্যটক পরিবহন করতে সক্ষম, এতে করে কোনটি লাখ টাকা আবার কোনটি দুই লাখ টাকার বেশি নিচ্ছে এক রাত দুই দিনের জন্য। সেগুলোতে এসি-সহ সকল ধরনের সুবিধা রয়েছে। কিন্তু এগুলো থেকে কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার।
গত ১০ বছরে এই নৌযানগুলোই টাঙ্গুয়ার হাওরকে ধ্বংস করেছে। সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম গত ২২ জুন টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ারসহ আশপাশের এলাকায় পর্যটকবাহী হাউজবোটগুলোর প্রবেশে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এই আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেই নিষেধাজ্ঞায় উল্লেখ করা হয়।
তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় বাসিন্দা ও হাউজবোট মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, টাঙ্গুয়ার হাওরে ২০১৯ সালে দুই লাখ পর্যটক আসে। ২০২০ সালে করোনা মহামারি থাকায় পর্যটক কমে যাওয়ার পরও লাখ খানেক পর্যটক আসে। ২০২১ সালে প্রায় সাড়ে তিন লাখ, ২০২২ সালে পাঁচ লাখ, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ, ২০২৪ সালে পাঁচ লাখের বেশি পর্যটক হাওর এলাকার পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে দেখেছে। আর সর্বশেষ চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত আনুমানিক কয়েক লাখ পর্যটক এসেছে। তারা ওইসব হাউজবোটগুলো দিয়ে পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে দেখেছেন। অত্যাধুনিক বিলাসবহুল হাউজবোটগুলো সুনামগঞ্জ জেলা শহরে অবস্থান করে, আর তাহিরপুরে রয়েছে হাউজবোটগুলো। সেখান থেকেই অনলাইনে প্যাকেজ ট্যুর গ্রুপের মাধ্যমে পর্যটন স্পটগুলোতে বেড়াতে আসে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক।
জামিল আহমেদ, জাকির উদ্দিনসহ সচেতন মহল বলছেন, সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে হাউজবোট মালিক ও ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলো। অথচ নীতিমালায় রয়েছে সরকারকে রাজস্ব দেওয়ার কথা। কিন্তু দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ কেন রাজস্ব আদায় না করে সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে তা বোধগম্য নয়। অথচ রাজস্ব আদায় করে পর্যটন এলাকায় উন্নয়ন কাজ করা সহজ হতো। হাউজবোটগুলোকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। যারা নীতিমালা লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এই বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম জানান, আমরা নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত পর্যটক পরিবহনকারী হাউজবোট ও নৌযান থেকে কোনো রাজস্ব নিচ্ছি না। তবে রাজস্ব আদায় করার নিয়ম রয়েছে। এই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম জানান, সুনামগঞ্জের জন্য বিগেনিং স্টেজে এখনও আমরা ওই ধরনের ট্যাক্স আরোপ করিনি তবে পুরোপুরি চালু হলে অবশ্যই সরকার একটি রাজস্ব পাবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর