ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চার নারী যাত্রীর কাছ থেকে ১০২টি স্মার্টফোন জব্দ করেছে কাস্টমস। সোমবার ১ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে দুবাই-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে বিশেষ অভিযানের সময় এসব ফোনসেট উদ্ধার করা হয়। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হলে ওই চার নারীকে গ্রিন চ্যানেল অতিক্রমের সময় সন্দেহজনক আচরণের কারণে আটক করা হয়। পরে তাঁদের দেহ তল্লাশি করে লুকানো অবস্থায় পাওয়া যায় ৯০টি আইফোন ও ১২টি গুগল পিক্সেল ফোন।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আগাম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কাস্টমস, এভিয়েশন সিকিউরিটি (এভসেক) এবং সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা যৌথভাবে ফ্লাইটটির যাত্রীদের পর্যবেক্ষণে রাখেন। তল্লাশির এক পর্যায়ে চার নারী যাত্রীর আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে তাঁদের আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে তাঁরা প্রথমে ফোন বহনের বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে বিশেষায়িত তল্লাশি চালিয়ে তাঁদের পোশাক ও শরীরের বিভিন্ন অংশে দক্ষতার সঙ্গে লুকানো ১০২টি উচ্চমূল্যের স্মার্টফোন উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আটক নারীরা ফোনগুলোর মালিকানা বা উৎস সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তাঁরা কাদের নির্দেশে এসব ফোন বহন করছিলেন কিংবা চোরাচালানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারও পরিচয় জানাতে রাজি হননি। ফলে কাস্টমস ফোনগুলো জব্দ করে এবং ঘটনাটিকে চোরাচালান চক্রের একটি সংগঠিত প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করছে। কাস্টমসের হিসাব অনুযায়ী, উদ্ধার করা ফোনগুলোর বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ৭৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। উচ্চমূল্যের এসব ফোন দেশে অবৈধভাবে আনা হলে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায় বলে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন।
এর আগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসা একই রুটের যাত্রীদের বিরুদ্ধে চোরাচালানের অভিযোগের ঘটনা সামনে এসেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুবাই ও শারজাহ রুটে আসা ফ্লাইটে দীর্ঘদিন ধরে সোনা, ফোন ও সিগারেট পাচারের চেষ্টা চলে আসছে। এসব ঘটনায় বেশ কয়েকবার যাত্রী আটক ও মালামাল জব্দ হলেও চক্রের মূল হোতারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকে। সম্প্রতি নজরদারি জোরদার করায় পাচারকারীরা রুট পরিবর্তনের কৌশল নেয়। তাঁরা এখন এমন যাত্রীদের ব্যবহার করছে যারা প্রথমে দুবাই থেকে চট্টগ্রামে আসে এবং পরে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছায়। এতে তাঁদের ধারণা, আন্তর্জাতিক আগমনী টার্মিনাল থেকে সরাসরি আসা যাত্রীদের তুলনায় সন্দেহ কম হবে।
আরও জানা যায়, উচ্চমূল্যের সোনা ও মোবাইল ফোন পাচারের ক্ষেত্রে পাচারকারীরা নতুন কৌশল হিসেবে উড়োজাহাজের ভেতরেই ‘ট্রান্সফার’ পদ্ধতি ব্যবহার করছে। দুবাই থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যাত্রীরা মাল বহন করে আনেন। এরপর বিমানের সিট বদল কিংবা টয়লেটের ভেতরে রেখে দেওয়া পদ্ধতিতে ফোন বা স্বর্ণ অভ্যন্তরীণ রুটে ওঠা সহযোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসা ওই সহযোগীরা পরে নির্দোষ যাত্রী সেজে গ্রিন চ্যানেল দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করে। তবে সম্প্রতি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কঠোর নজরদারি ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় পাচারকারীদের এসব কৌশল বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।
বিমানবন্দর কাস্টমস জানায়, আটক চার নারীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও কাস্টমস আইন অনুযায়ী মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা
মোবাইল ফোনসেট রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে। পাশাপাশি কারা তাঁদের ফোন বহনের নির্দেশ দিয়েছে, চক্রটির মূল সদস্যরা কোথায় অবস্থান করছে এবং তাঁদের কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে এসব খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, সম্প্রতি দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চোরাচালানবিরোধী নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। আধুনিক স্ক্যানার, মোশন ডিটেকশন ক্যামেরা, বডি স্ক্যানিং প্রযুক্তি এবং গোয়েন্দা নজরদারি আগের তুলনায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে বিগত কয়েক মাসে স্বর্ণ, স্মার্টফোন ও বিদেশি মুদ্রা পাচারের বেশ কয়েকটি চেষ্টাই নস্যাৎ করা সম্ভব হয়েছে।
আন্তর্জাতিক রুটে কঠোর নজরদারির কারণে পাচারকারীরা যাত্রীবাহী ফ্লাইটকে ‘হট রুট’ হিসেবে আর কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারছে না। তাই তাঁরা এখন অভ্যন্তরীণ রুটকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। তবে নিরাপত্তা সংস্থা ও কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেকোনো রুটেই পাচার প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি অব্যাহত থাকবে।
আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে নেটওয়ার্কে অবৈধ বা অনিবন্ধিত ফোন আর সচল থাকবে না। কিন্তু সরকারের এই উদ্যোগকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এবং শেষ সময়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটতে এক গভীর ষড়যন্ত্রে নেমেছে অবৈধ মোবাইল সিন্ডিকেট।
জানা গেছে, রাজধানীর মোতালেব প্লাজা, যমুনা ফাইটার পার্ক, বসুন্ধরা গুলিস্তান এবং চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারকেন্দ্রিক সিন্ডিকেটটি বর্তমানে অবৈধ ফোন বিক্রি না করে গোপনে তা মজুদ (Stockpile) করছে। তাদের পরিকল্পনা ১৬ ডিসেম্বরের ঠিক আগে বা পরে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ফোন সাধারণ গ্রাহকের কাছে গছিয়ে দেওয়া।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর