পাবনার চাটমোহর উপজেলা বিএনপি সংগঠিত করতে যাঁদের শ্রম, মেধা, ত্যাগ রয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আবুল হাসেম কাজল। সবাই তাঁকে হাসেম ফেশারী বলে চিনতেন, ডাকতেন। দীর্ঘ ১৪ বছর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পদে থেকে এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনাসহ দলকে সুসংগঠিত করেছিলেন। সর্বশেষ সময়ে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখনও তিনি ছিলেন উপজেলা বিএনপির অন্যতম সংগঠক এবং সাবেক সংসদ কে. এম. আনোয়ারুল ইসলামের অন্যতম আস্থাভাজন ব্যক্তি। লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থাকা এই ব্যক্তিটি জীবনে তেমন কিছুই করতে পারেননি, তবে অনেককে অনেক কিছু করে দিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।

এমনই একজন নির্ভীক দলপ্রেমী সমাজসেবকের জীবনের শেষ দিনগুলো ছিল অত্যন্ত করুণ ও হৃদয়বিদারক। প্রায় দুই বছর অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে থাকলেও দলের দুঃসময়ে তো নয়ই, এখন সুসময়েও তাঁর কেউ খোঁজ খবর পর্যন্ত নেয়নি। যিনি একসময় দলের নেতাকর্মীদের জন্য ছুটে যেতেন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে গঞ্জে, আজ তিনিই সুচিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে ঘরে পড়ে থেকে চিরবিদায় নিলেন।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের কুবিরদিয়ার গ্রামের নিজ বাসভবনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালীন তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ে, আত্মীয়স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। শনিবার (৯ আগস্ট) সকাল ১০টায় উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের এম. কে. আর. আহম্মদীয়া দাখিল মাদ্রাসা মাঠে তাঁর জানাজার নামাজ শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। তবে তাঁর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে এবং শেষ বিদায় জানাতে জানাজার নামাজে শরীক হয়েছিলেন উপজেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী। বেঁচে থাকাকালীন তাঁর খোঁজ খবর কেউ না নিলেও মৃত্যুতে যখন সবাই এলেন, এটাই হয়তো তাঁর আত্মার শান্তির জন্য অনেক বড় পাওয়া।

মূলগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস রেজা বলেন, "আমার রাজনৈতিক জীবনে হাতেখড়ি ছিলেন এই হাসেম সাহেব। তিনি আমাদের মূলগ্রাম ইউনিয়নে অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করিয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে আমরা তাঁর কোনো খোঁজ নিতে পারিনি, এটা আমাদের চরম ব্যর্থতা। তবে আর কোনো নেতার শেষ জীবন যেন এমন অবহেলায় না পড়ে, সেজন্য আমি দলের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করব।"

উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম কালু বলেন, "আবুল হাসেম ছিলেন বিএনপির দুঃসময়ের কাণ্ডারী। তিনি আমার রাজনৈতিক গুরু ছিলেন, এটা আমাকে স্বীকার করতেই হবে। রাজনৈতিক জীবনে তিনি যদি নিজের স্বার্থসিদ্ধির কথা চিন্তা করতেন, তাহলে তিনি অনেক টাকার মালিক হতে পারতেন। তিনি শুধু দলকে দিয়েই গেছেন, নিজে কিছুই নেননি। এই যেমন চাটমোহর রেলবাজারে খাদ্য গুদাম স্থাপন, রেলস্টেশনে বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেন স্টপেজ করানোসহ অনেক বড় উন্নয়নমূলক কাজে তাঁকে আমরা পাশে পেয়েছি। আজ তাঁর চিরবিদায় আমরা সত্যি ই ভীষণ মর্মাহত। তাঁর জন্য আমরা কিছুই করতে পারিনি। এটা আমাদের রাজনৈতিক চরম ব্যর্থতা ও লজ্জাজনক বিষয়।"

উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস আলো মাস্টার বলেন, "আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তাঁর সাথে ঘনিষ্ঠতা ছিল অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ। বিএনপির জন্য তাঁর অবদান বলে শেষ হবে না। তবে প্রকৃত অর্থে বলতে গেলে আমরা খুবই অকৃতজ্ঞ। আমরা তাঁর দুঃসময়ে পাশে থাকতে পারিনি।"