
"দক্ষতা অর্জনে অগ্রগামী" স্লোগান নিয়ে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় অবস্থিত নাগরপুর টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) ২০০৭ সালের ২৮ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি সিলেবাসে থাকা প্রশিক্ষণ কোর্সগুলোর মাধ্যমে তরুণদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে সরকারি কোড এবং লোকবল সংকটের কারণে এর কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির অধীনে বর্তমানে পাঁচটি প্রশিক্ষণ কোর্স চলছে, যা স্থানীয় যুবকদের আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু সরকারি কোডের অভাব এবং লোকবল সংকট এই অগ্রগতিকে কিছুটা বাধাগ্রস্ত করছে। এছাড়া প্রি-ডিপারচার ওরিয়েন্টেশন (পিডিও) প্রশিক্ষণ চালু থাকলেও, সরকারি কোড না থাকায় সরকারি বরাদ্দ ও রাজস্ব প্রশিক্ষণ শুরু করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে নাগরপুর টিটিসি-তে পাঁচটি প্রয়োজনীয় ও যুগোপযোগী ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে:
১. কম্পিউটার অপারেশন: ৩ মাস মেয়াদী। আসন ২৫, বয়স ১৮-৩৫ বছর, শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস।
২. গ্রাফিক ডিজাইন: ৩ মাস মেয়াদী। আসন ২৫, বয়স ১৮-৩৫ বছর, শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস।
৩. টেইলরিং অ্যান্ড ড্রেস মেকিং: ৩ মাস মেয়াদী। আসন ২৫, বয়স ১৮-৩৫ বছর, শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস।
৪. ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স: ৩ মাস মেয়াদী। আসন ২৫, বয়স ১৮-৩৫ বছর, শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস।
৫. ড্রাইভিং: ৩ মাস মেয়াদী। আসন ২৫, বয়স ২১ বছর বা তদূর্ধ্ব, শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস।
নাগরপুর টিটিসি-তে বিদেশগামী কর্মীদের জন্য প্রাক-বহির্গমন ওরিয়েন্টেশন প্রশিক্ষণ (পিডিও) রয়েছে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার আগে কর্মীদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দিক যেমন – আইন, সংস্কৃতি, নিরাপত্তা এবং আচরণ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। এটি বিদেশগামী কর্মীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী ও গুরুত্বপূর্ণ একটি কোর্স।
যদিও নাগরপুর টিটিসি-তে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু রয়েছে, তবুও সরকারি কোড এবং আইবিএস প্লাস রেজিস্ট্রেশন না থাকার কারণে কেন্দ্রটি সরকারি বরাদ্দ পায়নি। এর ফলে এখানে রাজস্ব প্রশিক্ষণ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। এই সমস্যা সমাধান হলে আরও ব্যাপক পরিসরে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে এবং এলাকার তরুণরা আরও ভালোভাবে প্রশিক্ষিত হয়ে দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
এছাড়াও লোকবল সংকট একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষক ও সহকারী না থাকায় একাধিক কোর্স পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ছে। এর ফলে অনেক কোর্সের প্রশিক্ষণ শুরু হতে বিলম্ব হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় মান বজায় রাখা যাচ্ছে না।
এদিকে প্রশিক্ষণ নিতে আসা প্রশিক্ষণার্থীরা প্রতিষ্ঠানটির প্রশংসা করছেন। একাধিক প্রশিক্ষণার্থী জানান, তারা এখানে গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স শেষ করে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করছেন এবং পরিবারের উপার্জনে সাহায্য করতে পারছেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু প্রশিক্ষণার্থীর নানান অভিযোগও রয়েছে। অধ্যক্ষ শাহনাজ পারভীনের সঙ্গে মোবাইল ফোন এবং সাক্ষাতে কথা বলতে চাইলে তিনি অনীহা প্রকাশ করেন এবং বক্তব্য দিতে সম্মত না হয়ে সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর ও অফিস সহকারী দ্বারা তথ্য প্রেরণ করেন।
এ বিষয়ে নাগরপুর টিটিসি-এর কর্তৃপক্ষ জানান, “নাগরপুর টিটিসি একদিকে এলাকার যুব সমাজকে দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করছে, অন্যদিকে লোকবল ও সরকারি কোডের অভাবে কার্যক্রমের বিস্তার নিয়ে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি। আমরা সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি, দ্রুত সরকারি কোড প্রদান করে এবং প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হোক, যাতে আমরা আরও বেশি সংখ্যক প্রশিক্ষণার্থীকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।”
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর