• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১৩ সেকেন্ড পূর্বে
প্রচ্ছদ / জাতীয় / বিস্তারিত
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট, ২০২৫, ১২:৪৪ দুপুর

জমি কিনলে শতকে ২৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা উৎসকর, কক্সবাজারে জমি বেচাকেনা স্থবির

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

কক্সবাজারে জমি ক্রেতারা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন যেখানে নিবন্ধন খরচ জমির মূল্যের তুলনায় অনেক বেশি। জেলার ১৮৭টি মৌজায় নতুন ভূমি নীতিমালা অনুযায়ী জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রতি শতকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা উৎসকর দিতে হচ্ছে। আবাসিক জমিতে এই হার দ্বিগুণ এবং বাণিজ্যিক জমিতে চারগুণ পর্যন্ত পৌঁছেছে।

উচ্চ এই উৎসকর হার প্রয়োগের কারণে জেলায় জমি ক্রয়-বিক্রয় কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমে ধস নেমেছে এবং সরকারের রাজস্ব আয়ও বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০২৫ সালের ২৪ জুন এক প্রজ্ঞাপন জারি করে, যা কার্যকর হয়েছে গত ১ জুলাই থেকে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, জেলা সদরের সব পৌরসভা, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষাধীন ও সিটি করপোরেশন-বহির্ভূত এলাকাগুলোতে শতকপ্রতি ২৫,০০০ টাকা উৎসকর। নাল জমির ক্ষেত্রে ২৫,০০০ টাকা, আবাসিক জমিতে ৫০,০০০ টাকা, বাণিজ্যিক জমিতে ১,০০,০০০ টাকা।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) তালিকা অনুযায়ী, জেলার ১৮৭ মৌজার মধ্যে ৮১ মৌজা কউকের আওতায়, যেখানে এই উচ্চহার সরাসরি প্রযোজ্য।

নীতিমালার উৎসকর মূলত সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য নির্ধারিত হলেও, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থাকার কারণে জেলাকেও একই তালিকায় যুক্ত করেছে এনবিআর।

ভূমি বিশেষজ্ঞদের মতে, সিটি করপোরেশন এলাকার জমির বাজারদর অনেক বেশি হলেও কক্সবাজারের মফস্বল বা গ্রামীণ জমির দাম তুলনামূলকভাবে কম। তবু একই উৎসকর হার প্রযোজ্য করায় অসামঞ্জস্য তৈরি হয়েছে।

কক্সবাজার সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, গত তিন সপ্তাহে সাফ কবলা দলিলের নিবন্ধন সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। বিকল্প হিসেবে বায়নানামা, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, হেবা বা দান-ঘোষণার দলিল হচ্ছে— যা সরকারের রাজস্ব আয়ে কোনো অবদান রাখে না।

কক্সবাজারে জমি রেজিস্ট্রেশনে উৎসকরের আকাশচুম্বী হার জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, ফলে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমে ধস নেমে সরকারি রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বর্তমানে ৮১ মৌজায় প্রতি শতকে ২৫ হাজার টাকা এবং ১০৬ মৌজায় ভিন্ন ভিন্ন হারে— প্রতি শতকে ১০ হাজার ও ৫০০ টাকা— উৎসকর ধার্য করা হয়েছে। অথচ কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) স্পষ্ট জানিয়েছে, উৎসকর আদায়ের সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। জেলা রেজিস্ট্রারও স্বীকার করেছেন, এ উৎসকরের উচ্চহার পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে এবং বিষয়টি ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দীন মিজান বলেন, রেজিস্ট্রি ফি বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় মানুষ জমি নিবন্ধন করতে পারছে না। এতে জনসাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।

ঈদগাঁও বোয়ালখালীর ইকবাল হোসেন বলেন, ৫ শতক ধানি জমি কিনেছি ১ লাখ টাকায়। রেজিস্ট্রেশন খরচ দিতে হচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ টাকা। জমির চেয়ে খরচ বেশি— এটা অবিশ্বাস্য।

মহেশখালীর সুবল দেবের অভিজ্ঞতা, আগে মফস্বলে উৎসকর ছিল প্রতি লাখে ২ হাজার টাকা। এখন শতকপ্রতি ২৫ হাজার। আমি ১০ শতক জমি কিনতে গিয়ে জানতে পারি শুধু উৎসকরই লাগবে আড়াই লাখ টাকা।

শ্রমিক জয়নাল আবেদীনের কণ্ঠ কেঁপে উঠল, ৫ শতক জমি কিনে রেজিস্ট্রি করতে গিয়েই জানতে পারি দেড় লাখ টাকা উৎসকর দিতে হবে। দিতে না পেরে রেজিস্ট্রি হয়নি, জমির মালিকও টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এখন আমি পথে বসা মানুষ।

কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক রাসেল চৌধুরী জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কক্সবাজারের ৮১টি মৌজায় প্রতি শতক নাল জমি ক্রয়ে ২৫ হাজার টাকা, আবাসিক জমিতে ৫০ হাজার টাকা এবং বাণিজ্যিক জমিতে প্রতি শতকে ১ লাখ টাকা উৎসকর দিতে হবে। আগে যেখানে প্রতি লাখে মাত্র ২ হাজার টাকা ছিল, এখন তা প্রতি শতকে ২৫ হাজার, ৫০ হাজার ও ১ লাখ টাকা হয়ে গেছে। তিনি এটিকে মনগড়া, হঠকারী ও বাস্তবতা বিবর্জিত সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। রাসেল চৌধুরী উল্লেখ করেন, উদাহরণস্বরূপ, ৪০ শতক বা এক কানি নাল জমির জন্য উৎসকর দিতে হবে ১০ লাখ টাকা, যা হাস্যকর এবং কার্যত অযোগ্য। এই হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে ৮১ মৌজায় জমি ক্রয়-বিক্রয় প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে, ফলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। তিনি পুনর্বিবেচনার জন্য মাননীয় জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি কমানো যায়।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার মোহাম্মদ রিশাদ উন নবী বলেন, উৎসকর নির্ধারণ সরকারের বিষয়। কউকের কোনো এখতিয়ার নেই। রাজস্ব বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী কর আদায় হয়।

জেলা রেজিস্ট্রার রেজাউল করিম বকসী মনে করেন, এই নীতিমালায় লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হচ্ছে। রাজস্ব বাড়ানোর পরিবর্তে কমে যাচ্ছে। ৮১ মৌজায় এই হার পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন আছে।

ভূমি মালিক, ক্রেতা এবং রিয়েল এস্টেট খাতের প্রতিনিধিরা বলছেন, অস্বাভাবিক উৎসকর কমানো ছাড়া জমি বাজারে গতি ফেরানো সম্ভব নয়। অন্যথায় জমি ক্রয়-বিক্রয় স্থবির হয়ে পড়বে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরকার ও সাধারণ মানুষ উভয়ই।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]