
স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে অনশনকারীদের ওপর হামলার পর এবার থানায় মামলার আবেদন করেছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মচারীরা। মহিউদ্দিন রনি ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কাফিসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে এজাহার দাখিল করেছেন হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার জুয়েল চন্দ্র শীল। এতে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও ৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেট্রোপলিটন কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে থানায় এজাহার জমা দিয়েছে বলে জেনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
মামলার আবেদনকারী ওয়ার্ড মাস্টার জুয়েল চন্দ্র শীল বলেন, আসলে মামলাটি পরিচালকের তরফ থেকেই করা হয়েছে। জাস্ট আমি ওয়ার্ড মাস্টার, তাই মামলার বাদী।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর তাদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে ওয়ার্ড মাস্টার বলেন, আমরা আসলে হামলা করিনি। ওরা (আন্দোলনকর্মী) হামলা করতে এসেছিল আমরা প্রতিরোধ করেছি। ওরা হামলা করতে এসেছে ওদের তাড়ানোর জন্য এরকম করা হয়েছে।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, হাসপাতালে নিরাপদ কর্মপরিবেশের দাবিতে বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে হাসপাতালের সামনের সড়কে মানববন্ধন করছিল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, হাসপাতালের পরিচালক, চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময়ে আন্দোলনকর্মী মহিউদ্দিন রনির নেতৃত্বে ২৫/৩০ জনের একটি দল এসে হামলা চালায়। শুরুতে মহিউদ্দিন রনি তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মী রফিকুল পাটোয়ারির মাথায় আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। এছাড়া অন্যান্য আসামীরা চাপাতি, লোহার রড, এসএস পাইপ, হকিস্টিক, লাঠি দিয়ে হামলা চালিয়ে ১০ জনকে আহত করে। এছাড়া মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নার্স-আয়ারা এলোপাথারি ছুটোছুটি করার সময়ে শ্লীলতাহানি ঘটায়। হাসপাতালের কর্মচারীরা পুর্নবার মানববন্ধনের আয়োজন করলে হামলাকারীরা হত্যার হুমকি দেয়।
অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছে, রাকিন, সুনান, সিফাত, শামিম, আল মুসা, সিফা, দাইয়ান, কাফি, এইচএম আবুল খায়ের, নূরুন নাহার ও সিয়াম। এদের মধ্যে অধিকাংশই স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী। কয়েকজন কনটেন্ট ক্রিয়েটরও আছেন।
যদিও বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিও বিশ্লেষণ ও প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সোয়া ১১টার দিকে হাসপাতালে মায়ের চিকিৎসা করাতে আসা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির সিকদারকে মারধর করে হাসপাতালের কর্মচারীরা। চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়ে হাসপাতালের কর্মচারী, নার্স ও ডাক্তারদের মানববন্ধনে যাওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানালে তাকে ও তার মাকে মারধর করে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। এরপরপরই হাসপাতালের কর্মচারীরা একস্থানে জড়ো হয়ে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে বিক্ষোভ করেন। তারা বিক্ষোভ নিয়ে হাসপাতালের সামনের সড়কে যান। সেখান থেকে ফিরে অনশনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। সেখানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের নির্মমভাবে মারধর করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেন। এমনকি সেবা নিতে আসা শিক্ষার্থীদেরও আন্দোলনকর্মী বলে মারধর করা হয়। এছাড়া মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এরমধ্যে অনেকেই সেখানে ছিলেন না।
আন্দোলনকর্মী মহিউদ্দিন রনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উস্কানিতে গতকাল আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। যে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লড়াই করছি তারা আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে চাইছে। আমরা বলেছি যতদিনে আমাদের দাবী পূরণ না হবে ততদিন আন্দোলন চলবে। মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে আমাদের দমানো যাবে না। গতকাল আমার সহযোদ্ধাদের মারধর করে অসুস্থ করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। তারা সুস্থ হলে আমরা কর্মসূচিতে ফিরব।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর
জাতীয় এর সর্বশেষ খবর