• ঢাকা
  • ঢাকা, শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ২ মিনিট পূর্বে
নিউজ ডেস্ক
বিডি২৪লাইভ, ঢাকা
প্রকাশিত : ১৬ আগস্ট, ২০২৫, ০১:৪৬ দুপুর

দেশীয় স্টার্টআপে বিনিয়োগে আস্থার সংকট: দায়বদ্ধতার চ্যালেঞ্জ

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

বাংলাদেশে স্টার্টআপ খাত এক দশকে অনেকটা পথ পেরিয়ে এলেও সম্প্রতি ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ কেলেঙ্কারি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে। উদ্ভাবনী চিন্তা ও যুব উদ্যোক্তাদের সাহসিকতা সত্ত্বেও কিছু স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বিনিয়োগকারীরা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন, বিশেষত ফাউন্ডারদের ব্যক্তিগত সততা ও নীতিনৈতিকতা নিয়ে।

*ফ্লাইট এক্সপার্ট: আস্থার পতনের প্রতীক*

দেশের অন্যতম অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ কম মূল্যে উড়োজাহাজের টিকিটের প্রলোভন দেখিয়ে অগ্রিম টিকিট বুকিংয়ের নামে কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়ে পালিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ সপরিবারে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। পুলিশ তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করলেও ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ কার্যত অসম্ভব। এই ঘটনা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম নয়, বরং গোটা ইকোসিস্টেমের বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর বড়সড় আঘাত। ভ্রমণ ও এয়ার টিকিটিং খাতে এমন প্রতারণা নতুন নয়; ২০২১ সালে ‘টোয়েন্টিফোর টিকিট ডটকম’ ৫০ কোটি টাকা নিয়ে পালায় এবং ই-কমার্স খাতের সর্ববৃহৎ ‘ইভ্যালি’ স্ক্যামও একই সময়ে ঘটে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে বিদেশি বিনিয়োগপ্রাপ্ত ই-লজিস্টিক্স প্রতিষ্ঠান ‘পেপার ফ্লাই’ বন্ধ হয়ে যায়, যেখানে ২০২১ ও ২০২২ সালে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘ইকম’ ২০২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল। তহবিল সংকটের কারণ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হলেও প্রশ্ন উঠেছে ফাউন্ডারদের সততা বা ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে। বিতর্কিত স্টার্টআপের তালিকায় আরেকটি বড় নাম ‘নগদ’। এই মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানটিকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ‘ইউনিকর্ন’ (পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত নয় এমন ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজারমূল্যের স্টার্টআপ) মনে করা হলেও, সম্প্রতি জানা যায় যে, তারা মূল অর্থের চেয়ে বেশি ভার্চুয়াল অর্থ বা ‘ই-মানি’ তৈরি করে বাজারে ছড়িয়ে রেখেছিল। এসব ঘটনায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিপাকে পড়েছেন।

*বিনিয়োগের চিত্র: আশা আছে, সন্দেহও আছে*

বাংলাদেশে ২০১০ সালের পর থেকে স্টার্টআপ সংস্কৃতি ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে। গত এক দশকে বাংলাদেশের স্টার্টআপগুলোতে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এসেছে, যার ৭৫ শতাংশ ছিল বিদেশি ভেঞ্চার ক্যাপিটালের মাধ্যমে। ২০২১ সালে সর্বোচ্চ ৪৩৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পায় বাংলাদেশি স্টার্টআপগুলো। ২০২২ সালে তা কমে ১২৫ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৩ সালে ৭১ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়, যা ৫০ শতাংশ হ্রাস। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে এটি আরও ৫০ শতাংশ হ্রাস পায়। ২০২৪ সালে সর্বাধিক বিনিয়োগ পেয়েছে লজিস্টিকস ও মবিলিটি খাতের স্টার্টআপগুলো (১৩.৫ মিলিয়ন ডলার), যার মধ্যে শুধু ‘পাঠাও’তেই ১২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এসেছে। পরের অবস্থানগুলোতে যথাক্রমে রয়েছে ফিনটেক (৭.৬ মিলিয়ন), জ্বালানি ও জলবায়ু (৩.৩ মিলিয়ন), সফটওয়্যার ও এন্টারপ্রাইজ (৩.৩ মিলিয়ন), ই-কমার্স ও রিটেইল (৩ মিলিয়ন), শিক্ষা বা এডটেক (১.৫ মিলিয়ন), স্বাস্থ্য (১.৩ মিলিয়ন) এবং ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার (১.২ মিলিয়ন)।

খাতভিত্তিক বিনিয়োগ পাওয়া শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে শপ আপ (৬.৫ মিলিয়ন-এডটেক), সোলশেয়ার (১.২ মিলিয়ন-জ্বালানি), মার্কোপোলো ডট এআই (১.৫ মিলিয়ন-সফটওয়্যার), প্রিয়শপ (২.৩ মিলিয়ন-ইকমার্স), টেন মিনিট স্কুল (১ মিলিয়ন-এডটেক), আরোগ্য (১ মিলিয়ন-স্বাস্থ্য) এবং ফসল (১ মিলিয়ন-অ্যাগ্রিকালচার)। ২০২৪ সালে বিনিয়োগের ৯৪ শতাংশই এসেছে ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে বিজনেস-টু-বিজনেস (বিটুবি) ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ‘শপ আপ’ ছাড়া তেমন কেউ বিনিয়োগ আনতে পারেনি। সৌদি আরবভিত্তিক বিটুবি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘স্যারি’ শপ আপে প্রায় ১১০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, যা রেকর্ড পরিমাণ হলেও বাকি খাতগুলোতে তেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। প্রি-সিড, সিড এবং সিরিজ এ পর্যায়ে তেমন কোনো বিনিয়োগ না হওয়ায় নতুন স্টার্টআপগুলো পুঁজি সংকটে পড়ছে।

স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড, সরকারের উদ্যোগে পরিচালিত ভেঞ্চার ফান্ড, গত বছর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র কয়েক কোটি টাকা বিভিন্ন ছোট প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে টেন মিনিট স্কুল, সেবা এক্স ওয়াই জেড, শেয়ারট্রিপ, এয়ারিয়া৭১ প্রভৃতি। তবে সরকারি বিনিয়োগের গতি ধীর এবং প্রক্রিয়া জটিল।

*পথ কী?*

আস্থা ফিরে পেতে হলে স্টার্টআপদের মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা, নির্ধারিত ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ মানতে বাধ্য করা এবং প্রতারণামূলক আচরণ প্রমাণিত হলে উদ্যোক্তাদের দ্রুত বিচার ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা জরুরি। বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ‘রেটিং সিস্টেম’ চালু করতে হবে, যাতে তারা স্টার্টআপের ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে পারেন। তা ছাড়া, স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের মতো সরকারি ফান্ডগুলোকে আরও গতিশীল ও প্রযুক্তিভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম করতে হবে এবং প্রয়োজনে আংশিক বেসরকারি পরিচালনার অধীনে আনতে হবে।

*শেষ কথা*

উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা মানেই ভবিষ্যৎ, কিন্তু তা হতে হবে স্বচ্ছ এবং নৈতিক ভিত্তিতে দাঁড়ানো। বাংলাদেশের স্টার্টআপরা যদি বিশ্ব বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে চায়, তাহলে প্রথমে তাদের নিজেদের ঘর পরিষ্কার করতে হবে। ফ্লাইট এক্সপার্ট কেলেঙ্কারির মতো উদাহরণগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, বিশ্বাস হারালে সব হারাতে হয়। এই ঘটনার মাধ্যমে উদ্যোক্তারা শিখুক, কেবল প্রযুক্তি আর ‘পিচ ডেক’ দিয়ে নয়, সত্যিকারের মূল্যবোধ দিয়েই একটি টেকসই প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়।

লেখক: শাওন সোলায়মান
প্রযুক্তি বিটের সাংবাদিক ও বিশ্লেষক, রূপালী বাংলাদেশ।*

রার/সা.এ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]