
‘হ্যালো বন্ধুরা, আই এম রিপন ভিডিও’—ফেসবুকে কয়েক বছর আগে এই ডায়লগ শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। নকল হাসি, ভন্ডামি আর ফিল্টার ভরা কনটেন্টের ভিড়ে একেবারে সাধারণ, সরল এক তরুণ হুট করেই সবার প্রিয় হয়ে উঠলেন। তিনি রিপন মিয়া। যাকে আমরা সবাই চিনি রিপন ভিডিও নামে।
‘আমার একটা রিপন মিয়ার মত জীবন চাই’—শহরে যান্ত্রিকতায় ক্লান্ত অনেকেই কি এমন ভাবছেন? আমরা জানি না। তবে যে জীবন ফরিংয়ের, মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা। শিক্ষিত মধ্যবিত্তে এমন আফসোস প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু কনটেন্ট ক্রিয়েটর রিপন কোন জীবনের দেখা পেলেন? যে জীবনে চিন্তা কম টেনশন নেই। আর আছে অফুরন্ত সুখ? রিপনের মধ্যে এই জীবনটা আছে। এমনটা বলাই যায়।
দুদিন আগে এক পডকাস্টে রিপন মিয়া নিজেই খুলে বলেছেন এমন কিছু কথা যার থেকে তারও একটা জীবন দর্শন ধরা পড়ে। শহরে মানুষের লাখ লাখ টাকা থাকলেও রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারে না।
আর তিনি সারাদিন কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে যে শান্তির ঘুম দেন তা কোটি টাকা দিয়েও কেনা সম্ভব নয়। এই হচ্ছে রিপন মিয়ার সোজা সাপ্টা ভাবনা। রিপন মনে করেন সুখের পিছনে ছুটলে তাকে পাওয়া যায় না বরং চাইতে হবে কম অল্প পেলেও শুকরিয়া থাকতে হবে স্রষ্টা যা দিয়েছেন তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে পারলে জীবনের প্রতিটা মুহূর্তই সুন্দর।
রিপন মিয়ার প্রাণ খোলা হাসির পেছনেও কি বেদনার কোন গল্প নেই? ভালোবাসার আঘাত বা অপূর্ণতা নেই? পডকাস্টে তিনি বলেছেন, তারও জীবনে প্রেম এসেছিল। তুমি দেবে কিছু আমি দেব কিছু। তা থেকে জন্ম নেবে ছোট্ট একটা শিশু। এমন ভাবনা ও বিশ্বাসে রিপন ছেঁকাও খেয়েছেন, তবে ভেঙে পড়েননি। একটা মেয়ে চলে গেছে তো কি হয়েছে এমন কাজ করব যেন আরো ১০ টা মেয়ে পেছনের লাইন ধরে- এই হচ্ছে রিপন মিয়া। হোঁচট খাওয়ার জায়গায় উঠে দাঁড়াতে হবে, এই জেদ আর আত্মবিশ্বাস থেকেই শুরু হয় তার ভিডিও বানানোর যাত্রা।
রিপন মিয়ার কাছে সফলতা মানে মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা আর সম্মান যা টাকা দিয়ে মাপা যায় না। তিনি বিশ্বাস করেন পরিবার যদি ঠিক থাকে তাহলে পুরো পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করা যায়। তার জীবনে কাজের চেয়ে বড় কোন ওষুধ নেই। কাজ শুধু শরীরকেই ভালো রাখে না। মনকেও ডিপ্রেশন থেকে দূরে রাখে। কারণ অলস মস্তিষ্কই শয়তানের কারখানা। তিনি তরুণদের বলেন, কোন কাজই ছোট নয়। একজন মুচি যখন জুতা সেলাই করে তখন সেও রাজকীয় কাজ করে। কারণ তার কাজের ফলেই আরেকজন চলতে পারে। দিনশেষে আমাদের সবার গন্তব্য একটাই। আর কাফনের কাপড়ে কোনো পকেট থাকে না। তাই যা করার এই জীবনেই করতে হবে।
যেখানে সম্পর্কগুলো সামান্য কারণে ঠুনকো কাচের মত ভেঙে যাচ্ছে সেখানে রিপন মনে করিয়ে দেন এক চিরন্তন সত্য। তিনি বলেন, আপনার কাবিনে কিন্তু আপনারে বউ রাখে না বউ রাখে মন থেকা তার মতে ২০ লাখ টাকার কাবিন দিয়ে সম্পর্ক ধরে রাখা যায় না। সম্পর্ক টিকে থাকে পারস্পরিক ভালোবাসা সম্মান আর বন্ধুত্বে। রিপন মিয়ার কাছে স্ত্রী শুধু স্ত্রী নন, তিনি একজন বন্ধু। একজন ভালোবাসার মানুষ এবং জীবনের সব গল্পের সঙ্গী। রিপন বলেন, ‘যদি বউরে বউ মনে করেন তাইলে তো হইলো না। এইডাই বউ, এইডাই বন্ধু, এইডাই সব।’
এই দর্শনী একটি সম্পর্ককে মজবুত করে তোলে। সংসারে ছোটখাট ঝগড়া বা মনোমালিন্য হবেই। কিন্তু তার জন্য সম্পর্ক শেষ করে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন ঝগড়া যতই করো না কেন থাকতে কিন্তু আমার সাথেই হবে। এই মানসিকতায় সম্পর্ককে আজ জীবন টিকিয়ে রাখে। রিপন মনে করেন দিনশেষে আইনি কাগজপত্রের চেয়েও বড় হলো মনের বাঁধন। এই সহজ সরল ও সৎ জীবনাদর্শই হয়তো আজ আমাদের সকলের চাওয়া। এটাই বাস্তব।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
বিনোদন এর সর্বশেষ খবর