• ঢাকা
  • ঢাকা, সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৭ মিনিট পূর্বে
প্রচ্ছদ / অপরাধ / বিস্তারিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশিত : ১৮ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:০৬ বিকাল

অবৈধ পথে কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি ৪ মোবাইল শপের

ফাইল ফটো

দেশে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসা মোবাইল হ্যান্ডসেটগুলো বহুল পরিচিত 'আনঅফিসিয়াল হ্যান্ডসেট' হিসেবে। পরিসংখ্যান বলছে দেশে আনঅফিসিয়াল হ্যান্ডসেটের কারণে বছরে ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে হচ্ছে সরকারকে। ভুগতে হচ্ছে দেশীয় হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারকদের।

সাম্প্রতিক প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, শুল্ক ফাঁকির এই স্রোতে দেশীয় হ্যান্ডসেট শিল্প টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদন প্রায় ১০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫৪.৭৬ লাখ ইউনিটে। জুন মাসে এক মাসেই উৎপাদন কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (MIOB) জানাচ্ছে, বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ দখল করেছে গ্রে মার্কেট। অথচ GSMA-এর নীতি ব্রিফে বলা হয়েছে, স্থানীয় কারখানাগুলো দেশের মোট চাহিদার ৯৯ শতাংশ পূরণ করার সক্ষমতা রাখে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আনঅফিসিয়াল হ্যান্ডসেট বিক্রি এখন অনেকটাই প্রকাশ্যেই হচ্ছে। শুল্ক ফাঁকির এই মোবাইল হ্যান্ডসেটগুলো বিক্রি করে বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছে- অ্যাপল গেজেট, সুমাস টেক, এসএমএম গেজেট, ড্যাজেল মোবাইল শপসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ফেসবুক ও ইউটিউবে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের দিয়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা অবৈধ চোরাই মোবাইল হ্যান্ডসেটের প্রচারণা চালাচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান।

এসব শপের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে- অ্যাপল, স্যামসাং ও মটোরোলার মতো ব্র্যান্ডের ৮০-৯০ শতাংশ ফোনই আনঅফিসিয়াল। গত ২০ জুলাই বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে অবস্থিত অ্যাপল গেজেট ও সুমাস টেকের স্টোরেও এই প্রতিবেদকে স্যামসাংয়ের কোনো অফিসিয়াল হ্যান্ডসেট দিতে পারেননি সেখানে কর্মরতরা। কিন্তু সেখানে আনঅফিসিয়াল হ্যান্ডসেটে সয়লাব। 

ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটি কিংবা চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ সব জায়গায়ই বড় বড় শোরুম খুলে বুক ফুলিয়ে চলছে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা। এর মধ্যে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ড্যাজেল (dazzle) মোবাইল শপ। যমুনা ফ্ল্যাগশিপ স্টোর ছাড়াও বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, মিরপুর, উত্তরা, ধানমন্ডি সীমান্ত সম্ভারে রয়েছে তাদের নিজস্ব স্টোর। সেখানেও বৈধ বাজারমূল্যের তুলনায় ৩০-৫০ হাজার টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে আনঅফিসিয়াল হ্যান্ডসেট।

এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় অবৈধ ফোন নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (NEIR) সিস্টেম চালু করা হলেও এর পূর্ণ বাস্তবায়ন এখনও হয়নি। বিটিআরসি ‘সিনেসিস আইটি’র সঙ্গে পুরনো চুক্তি নবায়ন না করে নতুন টেন্ডারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রায় ৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকার রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের পরিকল্পনা থাকলেও প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় অবৈধ ব্যবসায়ীরা আরও সুযোগ পাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এনবিআর ও বিটিআরসির সমন্বয়হীনতা, কাস্টমস গোয়েন্দা নজরদারির দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবই অবৈধ ব্যবসা বন্ধে বড় বাধা। সরকারের সংস্থার নীতির ভুল ও দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাই দেশে বৈধ মোবাইল উৎপাদন খাতকে ধ্বংসের করে, অবৈধ-চোরাই মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দিচ্ছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় হ্যান্ডসেট প্রস্তুকারকদের দাবি, চোরকারবারীদের দাপটে হুমকির মুখে স্থানীয় ১৭টি মোবাইল সেট নির্মাণ শিল্পের বিনিয়োগ। তাই এনইআইআরের পুরো সিস্টেম দ্রুত চালুর দাবি তাদের।

বেসিস সহায়ক কমিটির চেয়ারম্যান রাফেল কবির গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ওরাকলের ধোঁয়া তুলে বিটিআরসিতে পতিত সরকারের যারা কাজ করছেন এখনো, যারা চাকরি করছেন, তারা চেষ্টা করছিলেন ডাইরেক্ট পারচেস মেথড টেন্ডার ছাড়ে কাজটা একজনকে দিয়ে দেয়ার জন্য। আগের টেন্ডারে সরকার প্রতিবছর তাদেরকে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার অর্ডার দিতে যাচ্ছিলেন। এই ব্যয়ের পরিমাণ এখন অনেক কমে আসবে এবং সরকার এর থেকেও ভালো একটা সিস্টেম পাবে।

এক বছরের জন্য এনইআইআর সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রায় ৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকার ব্যয় ধরা হয়। বেসিসের আপত্তি আমলে নিয়ে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি থেকে সরে এসে গুণগত মান ও ব্যয়ভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতিতে এনইআইআর সিস্টেম বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসির কমিশন সভা।

বর্তমানে অবৈধভাবে আমদানি করা মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রির বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় সরকার প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

‘দেশের চাহিদার ৯৯ শতাংশই উৎপাদনের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও মোবাইল ফোনের বাজারের বিশাল অংশ আজ অবৈধভাবে আমদানি করা ফোনের দখলে। এসব ফোনের মধ্যে অনেকগুলো আবার নকল ফোন। যে কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ভোক্তারা। এসব ফোনের অনেকগুলোতেই আবার নকল আইএমই ব্যবহার করা হয়। যা অপরাধীরা ব্যবহার করায় এসব মোবাইল ফোন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।’

স্যামসাং মোবাইল বাংলাদেশের অনুমোদিত ন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউটর এক্সেল টেলিকম (প্রা.) লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুদ্দিন টিপু বলেন, স্যামসাং-এর ক্ষেত্রে,  মার্কেটে যে সকল হ্যান্ডসেট রয়েছে তার প্রায় ৫০% অবৈধ আমদানিকৃত। তার মানে, আমরা আমাদের উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ৫০% ব্যবহার করতে পারছি। এর ফলে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে বাংলাদেশ কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও এটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এবং তাদের বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, পাশাপাশি অবৈধ হ্যান্ডসেট আমদানির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে। চিন্তার বিষয় হল, এই অবৈধ আমদানির ফলে নিরাপত্তা হুমকি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে গ্রাহকদের মধ্যে ব্র্যান্ডের প্রতি অনাস্থা তৈরি হচ্ছে।  কারণ বাজারে ব্যাপক হারে অবৈধ, নকল ও রিফারবিশড মোবাইল সরবরাহ করা হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে, পুরো দেশের অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়ছে।

অবৈধ আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট/কর সম্পূর্ণ শূন্য। অথচ আমাদেরকে বৈধভাবে সেটেল করতে গেলে এই করের পরিমান দাড়ায় প্রায় ৩৫%। ‌‌এনইআইআর অ্যাক্টিভেশন-এর দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আমরা একাধিকবার বিটিআরসির সঙ্গে বসেছি। বিটিআরসিও আমাদের এনইআইআর (ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার) দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছে। আমরা নিয়মিতভাবে এনবিআর’র গিয়েছি এবং তাদেরকে ‘জাতীয় রাজস্ব ক্ষতির’ বিষয়টি অবহিত করেছি। এনবিআরও আমাদের দ্রুত ‘এনইআইআর’ বাস্তবায়নের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছে। এর পাশাপাশি, আমরা এনবিআরকে অনুরোধ করেছি যেন স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরে কঠোর মনিটরিং এবং আইন প্রয়োগ কার্যক্রম জোরদার করা হয়, যাতে অবৈধ হ্যান্ডসেট আমদানিকারক ও বিক্রেতা চক্রকে আটক করা যায়।

সিম্ফনি মোবাইল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও বাংলাদেশের মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (MIOB) প্রেসিডেন্ট জাকারিয়া শাহিদ বলেন, অবৈধ পথে বিপুল সংখ্যক স্মার্টফোন দেশে প্রবেশ করায় দেশীয় হ্যান্ডসেট উৎপাদন শিল্প মারাত্মক চাপে পড়েছে। ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া এসব ফোন বাজারে তুলনামূলকভাবে অনেক সস্তায় বিক্রি হচ্ছে, ফলে বৈধ আমদানিকারক ও স্থানীয় প্রস্তুতকারকরা প্রতিযোগিতায় টিকতে হিমশিম খাচ্ছে। বর্তমানে বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ দখল করে নিয়েছে এই অবৈধ ফোন, যা দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রি কমিয়ে দিচ্ছে এবং বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করছে।

তার দেয়া তথ্যানুযায়ী, অবৈধভাবে আসা ব্র্যান্ডগুলোর বেশিরভাগই নিম্নমানের যার মধ্যে রয়েছে ব্র্যান্ডের কপি, নকল পণ্য ও রিফারবিশড ফোন। এসব নিম্নমানের ডিভাইস থেকে নির্গত রেডিয়েশনও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি, যা ভোক্তারা বুঝতে পারছেন না। এর ফলে শুধু সরকারের রাজস্ব ক্ষতিই হচ্ছে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে দেশের প্রযুক্তি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং ভোক্তারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

অবৈধ হ্যান্ডসেটের বিষয়ে কথা বলতে অ্যাপল গেজেট, সুমাস টেক, এসএমএম গেজেট, ড্যাজেল মোবাইল শপের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগযোগের চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে ড্যাজেল বাংলাদেশের ওনার দিদারুল ইসলাম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। তবে তিনি ২৮ জুলাই থেকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি।

রার/সা.এ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]