
পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সহকারী কমিশনার মো. ইসাহাকের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও তাঁদের কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দুপুরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর স্টেশনে পঞ্চগড় জেলার কয়েকজন সিনিয়র গণমাধ্যমকর্মী আমদানি-রপ্তানির তথ্য চাইতে গেলে তিনি এমন অসদাচরণ করেন বলে জানা গেছে। তথ্য চাইতেই তিনি নানা অশোভন উক্তি করেন এবং সাংবাদিকেরা প্রতিবাদ করলে উত্তেজিত হয়ে তাঁদের কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।
বিষয়টি তাৎক্ষণিক রংপুরে কাস্টমস এক্সাইজ কমিশনারকে ফোন করে অবহিত করা হলে কমিশনারের প্রটোকল অফিসার দুঃখ প্রকাশ করেন এবং পরে কমিশনার বরাবর আবেদন করার কথা জানান।
এই কর্মকর্তার অফিস থেকে বেরিয়ে আসার পর ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত ১ বছর ধরে দায়িত্বপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তার বদলির আদেশ হয়েছে সম্প্রতি। গত কয়েকদিন ধরে তিনি ব্যবসায়ী, সিঅ্যান্ডএফদের ডেকে নিয়ে অবৈধ আয়ের বকেয়া টাকা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে প্রদান করতে হবে এমন মৌখিক আদেশ জারি করেন। ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফরা তার এই অবৈধ নির্দেশনা না মানায় গত ২ দিন ধরে তিনি অগ্নিমূর্তি হয়ে আছেন। এমতাবস্থায় গণমাধ্যম কর্মীদের আগমন এবং তথ্য সংগ্রহের বিষয়টিতে তিনি নাখোশ হয়ে পড়েন।
বন্দর সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, ব্যবসায়ী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ভারত, ভুটান, নেপাল এবং বাংলাদেশের সাথে এই বন্দরের অর্থবাণিজ্য কার্যক্রম চলছে। এই বন্দরে আমদানির বড় ক্ষেত্রই হচ্ছে পাথর। রপ্তানি হচ্ছে, আলু, পাট, ঔষধ, গ্রামীণ ঝুটসহ অনুমোদিত নানা পণ্য। ব্যবসায়ীদের নানা ভাবে ফাঁদে ফেলে আমদানি এবং রপ্তানির প্রতি কনসাইনমেন্ট (বিল অব এন্ট্রি) থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করে আসছে কাস্টমস। এই বন্দর দিয়ে আসা প্রতি টন পাথর থেকে কাস্টমস সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মাধ্যমে ১০ টাকা হারে বাধ্যতামূলক আদায় করে। অর্থাৎ প্রতি কনসাইনমেন্ট (বিল অব এন্ট্রি) থেকে আদায় করে ১০ হাজার টাকা। অন্যদিকে প্রতিটি রপ্তানির কনসাইনমেন্ট (বিল অব এন্ট্রি) থেকে আদায় হয় ২ হাজার টাকা। প্রতিদিন এই বন্দর দিয়ে সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টন পাথর আমদানি করা হয়। রপ্তানির হারও অনেক বেশি। অর্থাৎ প্রতিদিন বন্দর থেকে কাস্টমসের অবৈধ আয় ৪০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা। প্রতিদিনের হিসাব সপ্তাহের শেষ দিনে সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফদের কাছ থেকে বুঝে নেন তারা। আর এই টাকা তোলেন সহকারী কমিশনারের আস্থাভাজন এক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও)। এই ধারাবাহিকতা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। বিড়ম্বনা এড়াতে ব্যবসায়ীরা তাদের সিঅ্যান্ডএফদের মাধ্যমে এই অবৈধ অর্থ জোগান দিয়ে আসছেন। তারা বলেন, ঘুষের টাকা না দিলে কাস্টমস নানা প্রকার ফেকড়া বের করে তাদের বিড়ম্বনায় ফেলে। ফলে বিড়ম্বনা ও হয়রানি এড়াতে বাধ্য হয়েই তারা এই অবৈধ অর্থ প্রদান করে আসছেন।
দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে সরকার অর্থ বাণিজ্য খাতকে অধিকতর গুরুত্ব দিলেও পঞ্চগড়ের এই বাংলাবান্ধা বন্দরে কাস্টমস কর্মকর্তারা জাতীয় রাজস্ব আদায়ের নামে অবৈধ আয় নিয়ে বিভোর। ব্যবসায়ীদের ওপর এই অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অনেক ব্যবসায়ী কাস্টমসের এই অনিয়ম দুর্নীতিতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এই বন্দর থেকে। ফলে আশঙ্কাজনক হারে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এলাকার সচেতন মানুষ ও ব্যবসায়ীরা এই অবস্থার পরিবর্তন আশা করছে সরকারের কাছ থেকে।
এদিকে ২০২৩-২৪, ২০২৪-২৫ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আমদানি-রপ্তানির বিভিন্ন মূল্য এবং রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ও কতটি কনসাইনমেন্ট (বিল অব এন্ট্রি) করা হয়েছে তার তথ্য চেয়ে কমিশনার বরাবর আবেদন করা হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদনটি করতে গিয়েও অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। আবেদনের পর নিয়োগপত্র ও আইডি কার্ডের ফটোকপিও জমা দিতে হয়েছে।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর