
যেখানে ভাসানী সেতুর উদ্বোধন ঘিরে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছিল, সেখানে নৌকা, মোটরসাইকেল কিংবা বিভিন্ন বাহনে সবাই ছুটে এসেছে এই স্বপ্নের সেতু দেখতে। তবে সবার চেয়ে আলাদা নজর কেড়েছেন গাইবান্ধা শহরের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য সাদেক আলী সরদার (৬৮) ও তার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (৩৮)।
বুধবার ভোরে সাদেক চত্বর থেকে যাত্রা শুরু করেন বাবা-ছেলে। বাহনের ভরসা না নিয়ে টানা হাঁটতে থাকেন তারা। সকাল থেকে দুপুর—একনাগাড়ে ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পৌঁছে যান কাঙ্ক্ষিত সেতুতে। দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে তাদের ক্লান্ত মুখে ফুটে ওঠে অদম্য আনন্দের ঝিলিক।
সাদেক আলী সরদার জানান, সেনাবাহিনীতে চাকরির সুবাদে শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে ওঠে তার। সেই থেকেই হাঁটার প্রতি জন্ম নেয় বিশেষ ভালোবাসা। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত হেঁটে ভ্রমণ, দেশের নানা দর্শনীয় স্থান ঘোরা—সবকিছুরই সঙ্গী ছেলে মোস্তাফিজ। এ পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার পথ হাঁটার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তারা।
তিনি বলেন, “অনেক দিন ধরেই ইচ্ছা ছিল ভাসানী সেতুতে আসব। এবার সিদ্ধান্ত নিলাম হেঁটেই আসব। পায়ে হেঁটে ভ্রমণ এখন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। আজ এখানে এসে মনে হচ্ছে সত্যিই স্বপ্ন পূরণ হলো।”
ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাবার স্বপ্নকেই তিনি নিজের স্বপ্ন হিসেবে বেছে নিয়েছেন। “আলোকিত বাংলার স্বপ্নযাত্রা, আমরা করব জয়—এই স্লোগান নিয়েই বাবার সঙ্গে হাঁটা শুরু করি। এতে আমাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে। আজও সেই ধারাবাহিকতায় ৩০ কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছেছি ভাসানী সেতুতে।”
উল্লেখ্য, বুধবার দুপুরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আনুষ্ঠানিকভাবে মাওলানা ভাসানী সেতুর উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর থেকে দুই জেলার মানুষ সেতুর দু’প্রান্তে ভিড় জমায় উৎসবমুখর পরিবেশে।
সেতুটি চালুর মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের মানুষের বহুল প্রতীক্ষিত যোগাযোগের পথ উন্মুক্ত হলো। নতুন এই সেতু শুধু দুই জেলার সংযোগই নয়, বরং অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা ও পর্যটনের নতুন সম্ভাবনার দ্বারও খুলে দেবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সর্বশেষ খবর