
বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেতে রোহিঙ্গাদের সহায়তার অভিযোগে সাবেক জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের এক সদস্যসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (২০ আগস্ট) কক্সবাজার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন দুদকের সহকারী পরিচালক তুষার আহমেদ।
২০২১ সালের ২৫ মার্চ কক্সবাজার পৌরসভার কয়েকজন কাউন্সিলর ও পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। অভিযোগ ছিল, রোহিঙ্গা নারী নুরুন্নাহার বেগমকে (যিনি নিজেকে ইয়াছমিন আক্তার নামে পরিচয় দিয়েছিলেন) বাংলাদেশি নাগরিক দেখিয়ে তাকে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট পাইয়ে দেওয়া হয়।
নুরুন্নাহার আসলে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর বাসিন্দা এবং বর্তমানে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের নিবন্ধিত রোহিঙ্গা। কিন্তু ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে তিনি ২০১৭ সালের ৭ জুন কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করেন। ওইসব কাগজে তার বাবা-মা হিসেবে স্থানীয়দের নাম দেখানো হয় এবং পরিচয়পত্র, জন্মসনদ ও নাগরিকত্ব সনদ সত্যায়ন করেন পৌরসভার কয়েকজন জনপ্রতিনিধি।
দুদকের জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, কক্সবাজার পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ রফিকুল ইসলাম। ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মিজানুর রহমান। কক্সবাজারের নতুন বাহারছড়ার বাসিন্দা মো. হেলাল উদ্দিন বাদশা। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) এএসআই সাজেদুর রহমান। সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ মোহাম্মদ কায়সার নোবেলকে অব্যাহতি সুপারিশ করা হলেও আবারও তদন্তে নাম উঠে আসে।
তবে পুলিশের সাবেক পরিদর্শক প্রভাষ চন্দ্র ধর ও সাবেক কাউন্সিলর নোবেলকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
দুদক জানায়, জন্ম ও নাগরিকত্ব সনদ সত্যায়ন থেকে শুরু করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি এবং শেষ পর্যন্ত পাসপোর্টের জন্য আবেদন— প্রতিটি ধাপে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সহযোগিতা ছিল।
অভিযোগ অনুযায়ী, কাউন্সিলর মিজানুর রহমানের পরিচয়ের ভিত্তিতে ইয়াছমিন আক্তারের কাগজপত্র সত্যায়িত করা হয়। অন্যদিকে, হেলাল উদ্দিন বাদশা তাকে নিজের বোন পরিচয়ে ভুয়া নাগরিকত্ব সনদ সংগ্রহে সহায়তা করেন।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম জানিয়েছেন, অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত তারিখে কগনিজেন্স শুনানি শেষে আদালত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
দুদকের তথ্যমতে, শুধু এই একটি মামলা নয়, ২০২১ সালে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট করে দেওয়ার ঘটনায় অন্তত ১১টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় কক্সবাজার পৌরসভার একাধিক কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা ও স্থানীয় আইনজীবীরা জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। এরপর সহজেই তারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহ করে বিদেশে চলে যায়। এতে শুধু আইনশৃঙ্খলার ঝুঁকি নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
স্থানীয়দের মতে, রোহিঙ্গা শিবির ঘিরে পাসপোর্ট জালিয়াতি একটি বড় চক্রে পরিণত হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা না নিলে এ ধরণের অপকর্ম বন্ধ করা সম্ভব নয়।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর