
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি সিএনজি গ্যাস স্টেশনে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, একটি ফিটনেসবিহীন বাসে গ্যাস নেওয়ার সময় হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
এই অগ্নিকাণ্ডে ৯টি সিএনজি অটোরিকশা, একটি বাস, দুটি মোটরসাইকেল এবং পাম্পের একাংশ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। দুর্ঘটনায় ৬ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে আনুমানিক প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল পৌনে ৬টার দিকে একটি পুরোনো বাসে গ্যাস ভরার সময় হঠাৎ বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তের মধ্যে তা আশপাশে রাখা অন্যান্য গাড়িতেও ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ, বাহুবল ও ওসমানীনগর থেকে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে সকাল ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে পাম্পের কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাসের কর্মী রাসেল গ্যাস দিচ্ছিলেন এবং পাশেই ছিলেন ম্যানেজার জয়নাল মিয়া। ৩৭ পয়েন্ট গ্যাস দেওয়ার পর গ্যাসের পাইপ ছিঁড়ে গেলে বিস্ফোরণ ঘটে এবং মুহূর্তের মধ্যে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পাম্পে গ্যাস নিতে আসা আরও ১০টি সিএনজি ও বাসটি সম্পূর্ণরূপে ভস্মীভূত হয়।
অগ্নিকাণ্ডের সময় সিএনজি পাম্পের তিনতলায় ঘুমিয়ে থাকা কয়েকজন কর্মী প্রাণে বাঁচতে নিচে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন। আহতদের মধ্যে পাম্পের কর্মী রাসেল (২৫), ম্যানেজার জয়নাল আবেদিন (৪০) ও সহকারী ম্যানেজার শোয়েব আহমদ (৩০) উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও ৪ জন সিএনজি চালক আহত হয়েছেন, যদিও প্রাথমিকভাবে তাঁদের নাম জানা যায়নি। আহত শোয়েব আহমদ জানান, তাঁরা তিনতলায় ঘুমিয়ে ছিলেন এবং হঠাৎ আগুনের শব্দ শুনে উঠে দেখেন চারপাশে আগুন। তাঁরা তিনজন প্রাণ বাঁচাতে তিনতলা থেকে ধানখেতের কাদায় লাফিয়ে পড়ে রক্ষা পান।
এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে প্রায় ২০ কোটি টাকার প্রাথমিক ক্ষতির অনুমান করা হলেও, ফায়ার সার্ভিসের লোকজন জানিয়েছেন, দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসায় মূল পাম্পের গ্যাসের মজুতে আগুন পৌঁছায়নি, ফলে ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক কম হতে পারে। পাম্পের পাশেই বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের সাউথ সাউথ প্যাড ও জালালাবাদ গ্যাসের বিতরণ কেন্দ্র (ডিআরএস সেন্টার) অবস্থিত।
অল্পের জন্য এই দুটি গ্যাস সেন্টারে আগুন ছড়াতে পারেনি। জালালাবাদ গ্যাসের বিতরণ ডিআরএস সেন্টার থেকে সমগ্র নবীগঞ্জের আবাসিক সংযোগ এবং সিএনজি পাম্পের সংযোগ লাইন রয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের সময় এই ডিআরএস সেন্টারের সংযোগ লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা একটি বড় ধরনের বিপর্যয় এড়াতে সাহায্য করেছে।
সিলেট বিভাগীয় বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তফা ফারুক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি প্রাথমিক তদন্তে জানিয়েছেন, যে বাসে আগুন লেগেছিল সেটি ফিটনেসবিহীন ছিল। তিনি নবীগঞ্জ থানাকে বাসের চালক ও মালিকের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং প্রতিটি সিএনজি পাম্পকে ফিটনেসবিহীন যানবাহনে গ্যাস না দেওয়ার জন্য সতর্ক করেছেন।
নবীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ হাবিবুর রহমান জানান, তাঁরা খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুনে ১০টি সিএনজি, একটি বাসসহ পুরো পাম্প পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আহত ৪ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে সিলেটে পাঠানো হয়েছে। নবীগঞ্জ থানার ওসি শেখ কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, পুড়ে যাওয়া গাড়িগুলো উদ্ধার করে কয়েকটি সিএনজি মালিকের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। তবে বাসের কাগজপত্র পুড়ে যাওয়ায় এবং চালক পলাতক থাকায় এর মালিক বা ফিটনেস সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত শেভরন বাংলাদেশের মিডিয়া কমিউনিটি অফিসার জাহিদুর রহমান জানান, অগ্নিকাণ্ডের সময় বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে কোনো সমস্যা হয়নি, তাঁরা সবসময় সতর্ক ছিলেন।
হবিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাসে গ্যাস ভরার সময় বিকট শব্দ হয়ে আগুন লাগে। রিফুয়েলিং স্টেশনের মূল গ্যাসের মজুতে আগুন না পৌঁছানোয় বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ফিটনেসবিহীন বাসের চালক পলাতক থাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্ভব হয়নি। আউশকান্দি সিএনজি শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রোমান আহমদ জানান, তাঁদের সমিতির নয়টি গাড়ি পুড়ে ছাই হয়েছে। এই পাম্পটি পুড়ে যাওয়ার কারণে নবীগঞ্জের শত শত সিএনজি চালককে সিলেট বা বাহুবল উপজেলার সিএনজি পাম্প থেকে গ্যাস সংগ্রহ করতে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। তাঁদের সমিতির ৫-৬ জন সিএনজি চালক আহত হয়েছেন।
আউশকান্দি সিএনজি পাম্পের ইঞ্জিনিয়ার এম.এ বাতেন বলেন, পাম্পের ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলা সম্ভব নয় তাঁর ধারণা, যে বাসে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে, সেটি পুরাতন ও ফিটনেসবিহীন ছিল।
জালালাবাদ গ্যাসের নবীগঞ্জ আঞ্চলিক বিতরণ কার্যালয়ের প্রধান মো. আব্দুল কাদের বলেন, নবীগঞ্জবাসী একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের সময় তাঁরা সারা নবীগঞ্জের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর