
নোয়াখালী জেলার ২১ বছর বয়সী ইব্রাহিম খলিল ইমন ছোটবেলা থেকেই সরকারি চাকরি করার স্বপ্ন দেখতেন। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। পুলিশের চাকরিতে নিয়োগের সব পরীক্ষায় সফল হয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন তিনি, যোগদানের ডাকও পড়েছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের অবহেলায় এক করুণ দুর্ঘটনায় তাঁর সেই স্বপ্নের সমাপ্তি ঘটে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে খুঁটির খোলা তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে ঝলসে যায় ইমনের পুরো শরীর, এক পা হারান স্বপ্নবাজ এই যুবক। অভাব-অনটনের সংসারে চাকরি ও টাকার সংকটে পরিবারের সাথে দূর্বিষহ মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
নোয়াখালী সদর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে ইমনের জন্ম। গ্রামীণ পরিবেশে, ভাঙা কাঁচাবাড়িতে, উঠানে পিতার সহযোগিতায় বাঁশের উপর ভর করে ইমন এখন কোনোমতে চলাফেরা করেন। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহায়তায় কৃত্রিম পা লাগানো ও চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা হলেও বর্তমানে টাকার অভাবে তাঁর পরিবার চিকিৎসা করাতে পারছে না। হুইলচেয়ার কেনারও সামর্থ্য নেই তাদের। ১০ লাখ টাকায় জমি বিক্রি করে একমাত্র ছেলের চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে গরিব পরিবারটিও এখন নিঃস্ব। পঙ্গুত্বের কারণে কাজ করতে না পারায় সংসার চালানো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। দিনমজুর বাবার সীমিত আয়ে চিকিৎসা ও জীবিকা নির্বাহ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অনেক সময় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের গাফিলতির কারণেই এই দুর্ঘটনা, যা একটি পরিবারকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে। এলাকাবাসী ইমনকে তাঁর চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
ইমনের পিতা আবদুল কাদের অভিযোগ করে বলেন, "আমার দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসারে ছেলে সরকারি চাকরি করবে, আল্লাহ আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছিলেন। কিন্তু চাকরি যোগদানের কিছুদিন পূর্বে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকদের গাফিলতির কারণে আমার মেধাবী ছেলের এ করুণ অবস্থা। যেখানে সরকারি পুলিশের চাকরি করার কথা, সেখানে এখন বাড়িতে পঙ্গুত্ব বরণ করে বসে আছে ছেলেটি। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না। তার চিকিৎসা করতে গিয়ে ভিটেমাটি বিক্রি করতে হয়েছে। এখন ঠিকমতো ঔষধ কিনে দিতে পারি না। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আগে সহযোগিতা করলেও এখন করে না। দিন এনে দিন খাই। কাজ থাকলে ঘরে চুলা জ্বলে, না হলে না খেয়ে থাকতে হয়।" তিনি ছেলের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কাছে তার পূর্বের চাকরিটা ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবি জানান।
দুর্ঘটনায় আহত ইব্রাহিম খলিল ইমন বলেন, "সরকারি পুলিশের চাকরিতে যোগ দেওয়ার কয়েকদিন আগেও বিদ্যুতের লাইনে কাজ করতে গেলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মচারীদের গাফিলতিতে আজ আমার সুন্দর জীবন পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। একটা পা কেটে ফেলতে হয়েছে। আরেকটি পায়ের অবস্থাও ভালো না।" সরকারি চাকরির স্বপ্ন ভেঙে হতাশায় নিমজ্জিত হওয়ার পাশাপাশি শারীরিক অক্ষমতার কারণে তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি। পরিবারকে বোঝা মনে করছেন তিনি, যেখানে তাঁর পরিবারকে সহযোগিতা করার কথা, সেখানে পরিবার তাঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সোনাপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম প্রকৌশলী কায়সার আলী অভিযোগের বিষয়ে জানান, আহত ইমনের কৃত্রিম পা লাগাতে এক লাখ টাকা এবং চিকিৎসার ব্যয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। মানবিক বিবেচনায় তাঁর চাকরির একটি আবেদনপত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
একটি দুর্ঘটনা একটি জীবন ও তার পরিবারের সব স্বপ্ন কেড়ে নিতে পারে। ইমনের পরিণতি ঠিক তেমনই। অবহেলায় ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন কি ফেরত পাবে ইমন? ফেরত পাবে কি তার চাকরি? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে ইমন ও তার পরিবার।
সর্বশেষ খবর