
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় ঘুরে বিনামূল্যে সিমকার্ড বিক্রি হচ্ছে। গ্রামের অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে একাধিক সিমকার্ড ও বিকাশ অ্যাকাউন্ট। রেজিস্ট্রেশনকৃত ব্যক্তির অজান্তেই সেইসব সিমকার্ড ও বিকাশ অ্যাকাউন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে প্রতারণা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। অনুসন্ধানে এমন একাধিক ঘটনার তথ্য মিলেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্রামীণ হাটের মসলা ব্যবসায়ী বেড়া ডাকুরি গ্রামের আমজাদ আলী (৪৫) তিন বছর আগে বাড়ির সামনে মোটরসাইকেলে আসা দুজন সিমকার্ড বিক্রেতার কাছ থেকে শুধু এনআইডি ও আঙুলের ছাপের মাধ্যমে বিনামূল্যে সিমকার্ড নিয়েছিলেন। সম্প্রতি প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায়ের অভিযোগে ঘাটাইল থানার একটি মামলায় তার বাড়িতে পুলিশ আসে। পুলিশের কাছে জানতে পারেন, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিমকার্ড নম্বর ও বিকাশ অ্যাকাউন্ট তার নামে রেজিস্ট্রেশন করা।
আমজাদ আলী বলেন, “আমি তো এসব কিছুই বুঝি না। তারা বারবার আঙুলের ছাপ দিতে বললো, দিলাম। চোখ মিটমিট করতে বললো, করলাম। এখন শুনছি, তারা আমার নামে সিমকার্ড ও বিকাশ অ্যাকাউন্ট করে নিয়েছে। আমি ওই নম্বর চিনিই না।” পরে তিনি ঘাটাইল থানায় যোগাযোগ করে বাদীপক্ষের সাথে বিষয়টি মীমাংসা করেন।
আমজাদ আলীর স্ত্রী আসিয়া বেগম বলেন, “পুলিশ বাড়িতে আসার পর বিষয়টি জানতে পারি অথচ এই নাম্বার আমরা কখনো ব্যবহার করি নাই। সেসময় অন্তত ছয়জনের কাছে সিম বিক্রি করে তারা। এক ভাতিজার সাথে কিছুদিন আগে ঝামেলা হয়েছিল। আমরা এর সঠিক সমাধান ও বিচার চাই।”
অপর একটি ঘটনা ঘটেছে জামতৈল গ্রামের ফাতেমা বেগমের (৬৮) সাথে। জানা গেছে, কিছুদিন আগে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তিকে মুঠোফোনে হুমকি দিয়ে ০১৬১৮৭***৬৮ নম্বরে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। পরে ওই ব্যক্তি একটি দৈনিক পত্রিকার স্টাফের সহযোগিতায় জানতে পারেন, সিম-বিকাশ অ্যাকাউন্ট গোপালপুরের জামতৈল গ্রামের ফাতেমা বেগমের নামে রেজিস্ট্রেশন করা।
এই সূত্র ধরে ফাতেমা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “তিন বছর আগে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় মাইক লাগিয়ে সিমকার্ড বিক্রি করতে এসেছিলো। ২০ টাকায় একটি রবি সিমকার্ড কিনেছিলাম। তখন বারবার আঙুলের ছাপ নিয়েছিলো। আমাকে একটাই সিমকার্ড দিয়েছিলো, কিন্তু এই নাম্বার আমাকে দেয়নি। কয়টা সিম রেজিস্ট্রেশন করেছে বা বিকাশ করেছে কিনা, আমি জানি না। আমি এসব বুঝি না।”
কোনাবাড়ি বাজারের বাসিন্দা মো. রনি জানান, “কিছুদিন আগে এক ফেরিওয়ালার কাছ থেকে ২০ টাকায় সিমকার্ড কিনেছিলাম। সেই নম্বরের বিকাশ অ্যাকাউন্ট করতে গেলে দোকান থেকে জানানো হয়, আমার এনআইডি দিয়ে আগেই বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। অথচ আমি কিছুই জানি না।” পরে তিনি বুঝতে পারেন, ফেরিওয়ালা অন্য নম্বরে বিকাশ করে নিয়েছে।
এ বিষয়ে রবি-এয়ারটেলের মধুপুর জোনের এরিয়া ম্যানেজার মো. তারেক হোসেন বলেন, “আমি এখানে নতুন এসেছি। অনেক আগে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার অভিযোগ পেয়ে গোপালপুরের পুরো হাউজ বন্ধ করে দিয়েছি এবং আগের যারা কাজ করতো তাদের সরিয়ে দিয়েছি। এখন টেকনিক্যালি এমন ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই।”
আশা কসমেটিকস ও টেলিকমের মালিক আশরাফুল আলম জানান, “গ্রাহককে সচেতন হতে হবে। লোভে পড়ে পথেঘাটে সিমকার্ড কেনা যাবে না। অনুমোদনপ্রাপ্ত দোকান থেকে সিমকার্ড কিনলে বা বিকাশ অ্যাকাউন্ট করলে এমন ঘটনার সুযোগ নেই।”
ঝাওয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান তালুকদার বলেন, “আমার ইউনিয়নের একাধিক মানুষ এমন ঘটনায় বিপাকে পড়েছে, আমি গ্রামে ফেরি করে সিমকার্ড বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছি। কাউকে পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন বলেন, “এই চক্রের সন্ধান করা হচ্ছে। কাউকে পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর