
কক্সবাজার শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী বাঁকখালী নদী এখন দখল ও দূষণের চাপে মৃতপ্রায়। একসময় কস্তুরাঘাট হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত চলত যাত্রীবাহী লঞ্চ ও পণ্যবাহী জাহাজ। সেই নদীপথ এখন কেবল স্মৃতি। অন্তত ৩০০ একর প্যারাবন ধ্বংস করে এবং নদী ভরাট করে সেখানে গড়ে উঠেছে শত শত ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও নানা স্থাপনা।
নুনিয়াছটা থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটারজুড়ে নদী দখলের এই চিত্র আরও ভয়াবহ। বিগত এক দশকে গড়ে উঠেছে সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার আজ সোমবার থেকে উচ্ছেদ অভিযানে নামছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ যৌথভাবে এই অভিযান চালাবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ, র্যাব, কোস্ট গার্ড এমনকি সেনাবাহিনীও মাঠে থাকবে।
ভূমি অফিস ও বিআইডব্লিউটিএ পৃথকভাবে দখলদারদের তালিকা করেছে। সহস্রাধিক দখলদারের মধ্যে অন্তত ৩৫০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছেন। এ তালিকায় শাসকদল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল হুদা চৌধুরী, এমনকি এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কাশেমের নামও আছে। তবে রফিকুল হুদা চৌধুরী দাবি করেছেন, তিনি নদীর জমি দখল করেননি, বরং তাঁর জমি পৈতৃক।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে হাইকোর্টের নির্দেশে জেলা প্রশাসন ৪ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে এবং ৩০০ একর প্যারভূমি মুক্ত করে। কিন্তু গত ৪৫ দিনে রাজনৈতিক পরিবর্তনের সুযোগে একই জায়গায় ফের তৈরি হয়েছে নতুন স্থাপনা। স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসনের শিথিলতায় আবারও ঘরবাড়ি তোলার হিড়িক শুরু হয়।
নদীর বুকজুড়ে বর্জ্যের পাহাড়ও গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন কক্সবাজারে উৎপন্ন ৯৭ টনের বেশি বর্জ্যের মধ্যে প্রায় ৭০ টন সরাসরি ফেলা হয় বাঁকখালী নদীতে। বাকিটা চলে যায় সাগরে। এর সঙ্গে নতুন নির্মিত সেতুর প্রভাব মিলিয়ে নদীর প্রবাহ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। দেড় মাইল প্রস্থ নদী সংকুচিত হয়ে কোথাও কোথাও দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০০ ফুটে।
ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস)-এর চেয়ারম্যান মুজিবুল হক বলেন, সেতু ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে নদীর মরণদশা নেমে এসেছে। এতে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে।
গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন আগামী চার মাসের মধ্যে সব দখলদার উচ্ছেদ করতে এবং ছয় মাসের মধ্যে বাঁকখালী নদীকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ECA) ঘোষণা করতে। একইসঙ্গে নদীর আরএস জরিপ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ, ম্যানগ্রোভ বন পুনরুদ্ধার এবং নদী সংলগ্ন সব ইজারা বাতিলেরও নির্দেশ এসেছে। আদালত মামলাটিকে চলমান মামলা ঘোষণা করে প্রতিবছর জানুয়ারি ও জুলাই মাসে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলেরও আদেশ দিয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সম্প্রতি কক্সবাজার সার্কিট হাউসে সমন্বয় সভায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। দ্রুততম সময়ে নদী দখলমুক্ত করা হবে এবং পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে নদীর সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
সর্বশেষ খবর