
কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর পূর্ব-উত্তর পাড়ে ২৫৩ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছিল দেশের প্রথম জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প। ‘খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প’ নামে পরিচিত এই উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে ১৩৭টি বহুতল ভবন- যেখানে থাকার কথা ছিল ৪ হাজার ৪০৯ উদ্বাস্তু পরিবারের। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল সমুদ্রভাঙন ও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতদরিদ্র মানুষকে নতুন আশ্রয় দেওয়া। কিন্তু বাস্তবে ছবিটা ভিন্ন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, যাদের জন্য এসব ফ্ল্যাট নির্মাণ, তাদের অধিকাংশই বঞ্চিত হয়েছেন। বরাদ্দের তালিকায় উঠে এসেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী, রাজনৈতিক নেতা ও তাদের আত্মীয়স্বজন।
গত সোমবার কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক অনিক বড়ুয়া বাবুর নেতৃত্বে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট দিনভর অভিযান চালায়। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হুমায়ুন বিন আহমদ। তারা সরেজমিন পর্যবেক্ষণ ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে বরাদ্দে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পান।
২০১১ সালে ২১ মহল্লার পরিবারগুলোকে নিয়ে মূল তালিকা করা হয়েছিল। পরের বছরগুলোতে সেটি সংশোধন করা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালের হালনাগাদ তালিকায় বাদ পড়েন শত শত প্রকৃত উদ্বাস্তু। বরাদ্দ নীতিমালায় স্পষ্ট করে বলা থাকলেও যে ভূমিহীন হতদরিদ্ররা অগ্রাধিকার পাবেন, সেখানে ফ্ল্যাট গিয়েছে রাজনৈতিক নেতা ও তাদের ঘনিষ্ঠজনদের হাতে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে- সাবেক কাউন্সিলর এসআইএম আকতার কামালের বোন মিনা বেগম ও তার স্বামী খালেদ মোশাররফ ফ্ল্যাট পেয়েছেন, যদিও তারা খুরুশকুল এলাকার বাসিন্দা নন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সভাপতি আতিক উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজ উদ্দিন, যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেত্রী টিপু সুলতানাসহ অনেক প্রভাবশালী ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়েছেন। বিএনপি নেতারাও বাদ যাননি- ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি থেকে শুরু করে তাদের পরিবারের সদস্যরা তালিকাভুক্ত হয়েছেন। একাধিক ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই আলাদা ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার প্রকল্পের পুরনো তালিকা বাতিল করে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পূর্বের তালিকা ছিল ত্রুটিপূর্ণ, প্রশ্নবিদ্ধ ও পক্ষপাতদুষ্ট।
এখন প্রকৃত জলবায়ু উদ্বাস্তুদের খুঁজে বের করে নতুন তালিকা তৈরির কাজ চলছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন নীতিমালা-২০২৫ অনুসারে বরাদ্দ কার্যক্রম চালানো হবে।
বাংলাদেশে জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের সবচেয়ে বড় উদ্যোগ হিসেবে খুরুশকুল প্রকল্প একসময় আশার আলো দেখিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের দৌরাত্ম্য ও দুর্নীতির কারণে প্রকল্পটি ভিন্ন খাতে গড়ায়। দুদকের অভিযানে অনিয়মের চিত্র সামনে আসায় এখন প্রশ্ন উঠেছে- প্রকৃত আশ্রয়হারা মানুষরা কি এবার সত্যি তাদের ন্যায্য ফ্ল্যাট পাবেন?
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর