
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনা নদী থেকে বেপরোয়া বালু উত্তোলনের কারণে ভয়াবহ নদীভাঙন শুরু হয়েছে। এর ফলে আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার ধসে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি আশুগঞ্জ নৌবন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্পাঞ্চল এবং তীরবর্তী বসতি ও কৃষিজমি মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন নদীতে ৩৫ থেকে ৪০টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। প্রশাসনের নির্ধারিত সীমা অমান্য করে উত্তোলনকারীরা সরাসরি নদীর তীর ঘেঁষে খনন চালাচ্ছে। এতে চরসোনারামপুর গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বসতি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় পড়েছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে নদীর তীরে স্থাপিত ৪৫০ কেভি বিদ্যুতের রিভার ক্রসিং টাওয়ারকে ঘিরে। টাওয়ারের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় জাতীয় গ্রিড মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ২০ আগস্ট ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ফোরলেন প্রকল্পে বালুর চাহিদা মেটাতে ‘এ২ বি কর্পোরেশন’-কে তিন মাসের জন্য আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাল নিশান দিয়ে উত্তোলনের সীমানা নির্ধারণ করা হলেও স্থানীয়দের অভিযোগ, উত্তোলনকারীরা সেসব নিশান সরিয়ে সীমা অতিক্রম করছে।
এ বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফে মোহাম্মদ ছড়া বলেন, “ফোরলেন প্রকল্পের জন্য তিন মাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কেউ চুক্তিভঙ্গ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আক্তারের প্রতিনিধি কামাল আহমেদ জয় দাবি করেন, তারা ইজারার শর্ত মেনেই বালু তুলছেন। তার অভিযোগ, ভৈরবের একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলছে এবং এর দায় অন্যায়ভাবে তাদের ওপর চাপানো হচ্ছে।
এদিকে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ও বাসিন্দারা বলছেন, সরকারি বিভিন্ন প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল যে, এ এলাকায় বালু তুললে নদীভাঙন ও পরিবেশ বিপর্যয় ঘটতে পারে। তবুও প্রশাসনের অনুমোদনে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আশুগঞ্জের মেঘনাকেন্দ্রিক বিদ্যুৎ ও শিল্প স্থাপনাগুলো দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বিচারে বালু কাটার ফলে এই অবকাঠামো হুমকির মুখে পড়লে জাতীয় অর্থনীতি বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে আশুগঞ্জের বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহাসড়ক, শিল্পাঞ্চল ও হাজারো মানুষের বসতি নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর