
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমের সরকারি বাসভবনের সীমানা প্রাচীর থেকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মারক গ্রাফিতি’ মুছে ফেলা হয়েছে। বিপ্লবী শিক্ষার্থীদের আঁকা এই গ্রাফিতি নতুন করে রং করে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী, স্থানীয় রাজনীতিবিদ এবং সাধারণ মানুষ বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, এবং এটিকে ‘জুলাই যোদ্ধাদের প্রতি অবমাননা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। এই গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণ করে সারাদেশের মতো ময়মনসিংহের শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন দেয়ালে ‘রক্তাক্ত জুলাইয়ের’ গ্রাফিতি এঁকেছিলেন। জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবনের দেয়ালও বাদ যায়নি।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এই গ্রাফিতি বাসভবনের সামনে দেখা গেলেও সম্প্রতি সেটি আর নেই। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমের নির্দেশে গ্রাফিতিটি মুছে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, সম্ভবত জেলা প্রশাসকের এই আন্দোলনের স্মৃতি পছন্দ না হওয়ায় তিনি এই কাজ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, সার্কিট হাউস মাঠের পাশে অবস্থিত জেলা প্রশাসকের বাসভবনের দেয়ালটি সম্পূর্ণ নতুন করে রং করা হয়েছে, গ্রাফিতির কোনো চিহ্নই অবশিষ্ট নেই। যারা এই পথ দিয়ে যাচ্ছেন, তারা অবাক হয়ে দেয়ালের দিকে তাকাচ্ছেন এবং অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাহবুব এন্টারপ্রাইজের ক্যাশিয়ার নূরে আলম সিদ্দিকী এবং একজন রংমিস্ত্রি জানান, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের দেয়াল উঁচু করা, রঙ করা, কাঁটাতার লাগানোসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ১৮ লাখ টাকার কাজ পেয়েছে।
তারা জানান, প্রায় দেড় মাস ধরে এই সংস্কার কাজ চলছে। তাদের মতে, সৌন্দর্যবৃদ্ধি ও নিরাপত্তার স্বার্থেই দেয়াল উঁচু করে নতুন রঙ লাগানো হয়েছে। নতুন করে গ্রাফিতি আঁকার কোনো চুক্তি হয়নি।
ঠিকাদার মাহবুব রেজা করিমের ক্যাশিয়ার নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘মোট এক হাজার ৮০০ ফুট দেয়ালের মধ্যে ৩০০ ফুটে কাঁটাতার দেওয়া হবে। পুরো কাজ শেষ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। গ্রাফিতি মুছে ফেলার এই ঘটনাটি অনেকেই ক্ষোভের সঙ্গে দেখছেন।’
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসকের বাসভবন থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি মুছে ফেলার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা শাখার সদস্যসচিব আলী হোসেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা রক্ত দিয়ে যে গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল, তার স্মারক হিসেবে আমরা শহরের বিভিন্ন দেওয়ালে গ্রাফিতি এঁকেছিলাম। জেলা প্রশাসকের বাসভবনের দেয়ালটিও ছিল সেই বিপ্লবের একটি প্রতীক। এটি কেবল একটি ছবি ছিল না, এটি ছিল জুলাই বিপ্লবের চেতনা ও শহীদদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা। এটিকে মুছে ফেলা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক। এছাড়াও তিনি জুলাই গ্রাফিতি দ্রুতই আগের মতো করেই অঙ্কন করার দাবি জানান।’
ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকন বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের এই গ্রাফিতি মুছে ফেলার ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার আলোচনা করা প্রয়োজন ছিল।’
ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট এএইচএম খালেকুজ্জামান এই ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এটি জুলাই যোদ্ধাদের অবমাননার শামিল।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মফিদুল আলমকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর