
রাজবাড়ী ও রাজশাহীতে গতকাল শুক্রবার পৃথক দুটি খানকায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার খানকায় বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা, অগ্নিসংযোগ ও পাল্টা সংঘর্ষে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। নুরাল পাগলার লাশ তুলে উত্তেজিত জনতা পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত একজন নিহত ও শতাধিক লোক আহত হয়।
রাজশাহীতে বিক্ষুব্ধ জনতা দেড় শতাধিক মুসল্লিকে নিয়ে একটি খানকা শরিফে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। গোয়ালন্দে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় রাসেল মোল্লা (২৮) নামের এক যুবক নিহত হন। তাঁর বাড়ি গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নের জুটমিস্ত্রিপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আজাদ মোল্লার ছেলে।
গতকাল এক বিবৃতিতে নুরাল পাগলার কবর অবমাননা ও মরদেহে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একে অমানবিক ও জঘন্যতম অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে সরকার বলেছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেশের মূল্যবোধ, আইন এবং সভ্য সমাজব্যবস্থার প্রতি সরাসরি আঘাত।
গোয়ালন্দে গতকাল জুমার নামাজের পর উত্তেজিত জনতা নুরাল পাগলার দরবার শরিফে হামলা চালায়। জানা গেছে, গত ২৩ আগস্ট গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নুরাল পাগলার মৃত্যুর পর তাঁকে মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচুতে কাবা শরিফের আদলে তৈরি এক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজবাড়ীজুড়ে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামে জনতা।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল স্থানীয় ঈদগাহ মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করে তারা। সমাবেশ শেষে মিছিল বের করে নুরাল পাগলের দরবার শরিফে হামলা চালায়। দরবারের ভক্তরা পাল্টা প্রতিরোধে নামলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
চলে ইটপাটকেল, লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্রের প্রয়োগ। জনতা নুরাল পাগলার মরদেহ তুলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ওপর এনে তা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হয়। গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন অন্তত ২২ জন। সেখান থেকে ১৯ জনকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. এস. এম. মাসুদ।
তিনি জানান, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গোটা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। স্বাস্থ্য বিভা Visit Siteগ ও স্থানীয় প্রশাসন সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
ঘটনার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ও পুলিশের পিকআপ ভাঙচুর করা হয়। বর্তমানে গোয়ালন্দে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শরীফ আল রাজীব জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে ফরিদপুর হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর