
এনজিও কর্মকর্তাকে হাত-পা-চোখ বেঁধে অমানবিক নির্যাতন ও ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে সরিষাবাড়ী উপজেলা যুব মহিলালীগের সভাপতি অনুপমা সূত্রধর ও তাঁর পুত্র প্রিন্স আদিত্য সরকারকে গ্রেফতার করেছে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ। শনিবার তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার বীর ধানাটা এলাকার প্রীতম চন্দ্র সরকার হিরণের স্ত্রী অনুপমা সূত্রধর উপজেলা ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে গত ৪ সেপ্টেম্বর দুই লাখ টাকা ঋণ নেন। পরদিন সকালে যুব মহিলালীগের সভাপতি অনুপমা সূত্রধরের অনুরোধে এনজিও কর্মকর্তা রনজিত চন্দ্র বর্মন তাঁদের বাসায় যান। বাসায় প্রবেশের পরপরই পূর্বপরিকল্পিতভাবে অনুপমা সূত্রধর, তাঁর স্বামী প্রীতম চন্দ্র সরকার হিরণ, পুত্র প্রিন্স আদিত্য সরকারসহ আরও কয়েকজন তাঁকে ঘরে নিয়ে আটকে দেন। এরপর তাঁর হাত-পা, চোখ বেঁধে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন। এনজিও কর্মকর্তার মুক্তির বিনিময়ে তাঁরা ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অসম্মতি জানালে তাঁকে বিবস্ত্র করে পায়ুপথে মরিচের গুঁড়ো ঢুকিয়ে ভিডিও ধারণ করেন। অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এনজিও কর্মকর্তা তাঁর স্ত্রীকে ফোন দিয়ে ব্যাংকের কয়েকটি চেক বইয়ের পাতা অনুপমা সূত্রধরের ছেলে প্রিন্স আদিত্য সরকারকে দিতে বলেন। এরপর তাঁরা ব্যাংকের চেক বইয়ের পাতায় এনজিও কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিয়ে নেন।
এদিকে স্বামীকে না পেয়ে এনজিও কর্মকর্তার স্ত্রী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। থানা পুলিশ আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় লোকেশন শনাক্ত করে থানার এএসআই শাহাদাৎ হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে এনজিও কর্মকর্তা রনজিত চন্দ্র বর্মনকে উদ্ধার করে। এ ঘটনার সাথে জড়িত অনুপমা সূত্রধর ও তাঁর পুত্র প্রিন্স আদিত্য সরকারকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
এ ব্যাপারে এনজিও কর্মকর্তা রনজিত চন্দ্র বর্মন সাংবাদিকদের বলেন, অনুপমা সূত্রধর এর আগেও ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে ঋণ নেন। তবে তাঁর লেনদেন নিয়মিত ছিল না। তবুও তাঁকে চলতি মাসে দুই লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। আমাকে ফাঁসানোর জন্য তিনি ছলনা করে ৫ সেপ্টেম্বর সকালে বাসায় ডেকে নেন। এরপর বাসার রুমে ঢুকিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তাঁরা। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় অনুপমা সূত্রধর, তাঁর স্বামী, ছেলে ও আরও একজন মিলে আমাকে অমানবিক নির্যাতন করেন। এ ঘটনার ন্যায় বিচার দাবি করছি।
অভিযোগ অস্বীকার করে আটক অনুপমা সূত্রধর বলেন, ঋণ নেওয়ার আগে ও পরে এনজিও কর্মকর্তা রনজিত চন্দ্র বর্মন আমাকে মোবাইল ফোনে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে পরবর্তীতে আর কখনো ঋণ দিবেন না বলেও জানান তিনি। কেন বারবার ফোন দিয়ে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয় সেই বিষয়টি জানার জন্যই তাঁকে বাসায় ডেকে আনা হয়েছিল।
সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রাশেদুল হাসান রাশেদ জানান, উপজেলা ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা রনজিত চন্দ্র বর্মনকে অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে ২০ লাখ টাকা দাবির ঘটনার সাথে জড়িত অনুপমা সূত্রধর ও তাঁর ছেলে প্রিন্স আদিত্য সরকারকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতার অভিযান চলমান রয়েছে।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর