
পিপলস লিজিং এন্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস কোম্পানী এর হাজার হাজার আমানতকারীদের পক্ষে আজ এক “সংবাদ সম্মেলন” এর আয়োজন করা হয় আজ ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ইং ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের দ্বিতীয় তলায় জহুর হোসেন চৌধুরী হলে।
উক্ত অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পিপলস লীজিং-এ সকল আমানতকারীদের পক্ষে, প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক। তিনি সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন যে, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি লাইসেন্সধারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং এন্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিঃ-এ সহজ সরল বিশ্বাসে আমাদের সারাজীবনের সঞ্চিত ও কষ্টার্জিত অর্থ আমানত হিসাবে উক্ত পিপলস লিজিং কোম্পানীতে জমা রেখেছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কোম্পানীর তৎকালীন মালিক/পরিচালকগন পিপল্স লীজিং কোম্পানীর অর্থ নামে-বেনামে লুঠপাঠ করে নিয়ে যায়। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক পিপল্স লীজিং কোম্পানী-কে সহযোগীতা না করে এবং দোষীদের বিচার না করে বরং কোম্পানীর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং ২০১৯ইং সালে হাইকোর্টে উক্ত কোম্পানী লিকুডিয়েশনের জন্য আবেদন করে। ফলে পিপলস লিজিং-এর হাজার হাজার আমানতকারীগন তাদের কষ্টার্জিত অর্থ ফেরত পাচ্ছিলেননা এবং তারা চরম অসহায় অবস্থায় দিন যাপন করছিলেন।
হাজার হাজার আমানতকারীগন আর তাদের লক্ষাধিক পরিবারের সদস্যরা এক অনিশ্চিত, অসহায় ও দু:চিন্তায় জীবন-যাপন করছিলেন। এই টাকা থেকে অনেক অবসরপ্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের সংসারের ব্যয় নির্বাহ হত, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চলতো, চিকিৎসার জন্য ব্যয় হত। কিন্তু তা সব বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশ ব্যাংক হঠাৎ করে পিপল্স লীজিং কোম্পানী বন্ধ করে দেওয়ার জন্য অনেকে সময়মতো চিকিৎসার জন্য অর্থের অভাবে এই পর্যন্ত প্রায় ৩৫জন আমানতকারী মৃত্যু বরণ করেছেন। এমনকি ক্যান্সার ও জঠিল রোগে আক্রান্ত আমানতকারীগন অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না ।
নিঃস্ব ও অসহায় হয়ে আমানতকারীগণ হাইকোর্টে পিপল্স লীজিং কোম্পানীটি পুনরায় চালুর জন্য আবেদন করিলে- আমানতকারীদের আবেদন হাইকোর্ট মঞ্জুর করেন এবং ২০২১ইং সাল থেকে পিপল্স লীজিং কোম্পানীটি হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে ভালভাবেই চলছে। এ পর্যন্ত কয়েক হাজার আমানতকারী তাদের অর্থ ফেরৎ পেয়েছেন। কোম্পানী শেয়ার বাজারে গিয়েছে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা-বানিজ্য পরিচালনা করে কোম্পানীটিকে লাভজনক পর্যায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে হাইকোর্ট ৪ জন পূর্ববর্তী পরিচালক কে ১৪০০ কোটি টাকা কোম্পানীতে ৬ মাসের মধ্যে জমা প্রদানের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। ফলে কোম্পানীর সকল আমানতকারীগন তাদের আমানতের অর্থ প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ফেরৎ পাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে ।
উল্লেখ্য যে, মাননীয় হাইকোর্ট কর্তৃক পিপল্স শীজিং কোম্পানীর যে পরিচালনা পরিষদ গঠন করে দিয়েছেন, তাহার ফলে পিপল্স লিজিং কোম্পানীটি সুষ্টু ও সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়েছে। ইতিমধ্যে উক্ত পরিচালনা বোর্ড/ম্যানেজমেন্ট পিপল্স লীজিং এর যে সকল উন্নয়ন করেছে তাহা নিম্নরূপ :-
১. ২০০ কোটি টাকা ডিফল্টারের নিকট থেকে উদ্ধার করেছেন।
২. প্রায় ১ হাজার আমানতকারীদের অর্থ সম্পূর্ণ ফেরত দিতে সক্ষম হয়েছেন ।
৩. সকল আমানতকারীকে ১০-১২লক্ষ টাকা করে ইতিমধ্যে ফেরত প্রদান করেছেন।
৪. কোম্পানীটিকে শেয়ার বাজারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
৫. পিপল্স লীজিং কোম্পানীর পাওনা পূর্ববর্তী ৪জন পরিচালকের নিকট ১৪০০ কোটি টাকা আদায়ের জন্য মহামান্য হাইকোর্ট থেকে রায় প্রাপ্ত হয়েছেন- (ডিসেম্বর ২০২৫ইং এর মধ্যে এই অর্থ পিপল্স লীজিং কোম্পানীতে ফেরৎ প্রদানের জন্য ঐ ৪জন ডিফল্টার পরিচালককে হাইকোর্ট আদেশ প্রদান করেছেন)।
৬. কোম্পানীর ৬ বছরের পেন্ডিং এ.জি.এম সিকিউরিটি এক্সচেইঞ্জ কমিশন এর নির্দেশনা মোতাবেক সম্পন্ন করেছেন।
৭. আদালতের নির্দেশে ক্ষুদ্র ঋনের ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনা করিতেছেন।
৮. আমানতকারীদের ২টি কিস্তির আমানতের অর্থ এবং Extreme Necessity এর অর্থ কোম্পানী ফেরৎ প্রদান করেছেন ।
৯. কোম্পানীটি ৫বছর মেয়াদি একটি এ্যাকশন প্লান তৈরী করেছেন যাতে আমানতকারীরা তাদের সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত পায় এবং কোম্পানী ঘুরে দাড়ায় সেই লক্ষ্যে কোম্পানী এগিয়ে যাচ্ছে।
১০. মহামান্য হাইকোর্টের কোম্পানী কোর্টের নির্দেশে পিপল্স লিজিং এর অর্থ যারা আত্মসাৎ করেছিল তাদের বিষয়ে একটি “ফরেনসিক অডিট” সম্পূর্ণ করেছেন। যাহার ফলে অনেক ডিফল্টারদের আসল চেহারা বেরিয়ে এসেছে এবং কে কত টাকা পিপল্স লীজিং কোম্পানী থেকে আত্মসাৎ করেছে তার সম্পূর্ণ প্রমাণ মহামান্য হাইকোর্টে জমা প্রদান করেছেন।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর- পিপল্স লীজিং কোম্পানী (যাহা ২০২১ইং সাল পর হইতে বর্তমানে ভালভাবে চলছে) সেই কোম্পানীকে হঠাৎ করে লিকুডিয়েশন বা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেন, যাহা গত ২২শে আগষ্ট ২০২৫ইং তারিখে “দি ডেই লি স্টার” পত্রিকায় এবং দৈনিক স মকাল পত্রিকা সহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্টিং ও অনলাইন মিডিয়ায় সংবাদটি প্রচারিত হয়। যদি বাংলাদেশ ব্যাংক চালু অবস্থায় পিপল্স লীজিং কোম্পানীকে বন্ধ করে দেন, তাহলে একদিকে অসহায় হাজার হাজার আমানতকারীরা তাহাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হবে তাহারা বিরাট আর্থিক ক্ষতিগ্রন্থ হবে এবং নিঃস্ব ও অসহায় হয়ে যাবে। অন্যদিকে- পিপল্স লীজিং কোম্পানীর ডিফল্টার/ঋণ খেলাপী ও প্রকৃত দোষীরা পার পেয়ে যাবে। যাহা ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। তাই আমানতকারীদের দাবী পিপল্স লীজিং কোম্পানী যেন কোনভাবেই বন্ধ না করা হয়।
পিপল্স লীজিং কোম্পানীর মতো চালু অবস্থায় বাংলাদেশের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে হঠাৎ করে বাংলাদেশ ব্যাংক বন্ধ করার পায়তারার কি কারণ? কেন? কার স্বার্থে? যদি পিপল্স লীজিং বন্ধ করা হয়, সেটা হবে এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের চরম ব্যর্থতা। দেশের অর্থনীতির ইতিহাসের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান, অর্থ উপদেষ্টা, অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর এর নিকট হাজার হাজার আমানতকারীদের অনুরোধ- প্লিজ এই অবিবেচনা প্রসুত, জনগনের স্বার্থের বিরুদ্ধে, সর্বনাশা এই সিদ্ধান্ত থেকে নিবৃত্ত হন। অন্যথায় দেশে-বিদেশে ঘাপটি মেরে থাকা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটেরা ও ঋণ খেলাপিরা পার পেয়ে যাবে। অন্যদিকে, লক্ষাধিক সাধারন আমানতকারীরা শেষ সম্বলটুকুও হারাবে এবং নিঃস্ব হয়ে যাবে। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানুষগুলো চাকুরী হারাবে। সবিশেষে দেশের অর্থনীতির ইতিহাসের একটি কালো নির্মম একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হবে। আর বেঁচে যাবে লুটেরারা, জনসাধারনের অর্থ আত্যসাতকারিরা। যাহা হবে নীরিহ আমানতকারীদের প্রতি অন্যায় ও অভিচার।
অতএব, বর্তমান সরকারের নিকট আমাদের আকুল আবেদন- পিপল্স লীজিং থেকে লুট হওয়া-আত্মসাৎকৃত যে টুকু সম্পদ দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তা পুনরুদ্ধার করা। মহামান্য হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী ১৪০০ কোটি টাকা আদায় করতে সহযোগীতা করা এবং এই অর্থ আদায় করে নীরিহ আমানতকারীদেরকে সম্পূর্ণ অর্থ ফেরৎ প্রদান করা এবং আমানতকারীদের পূর্ণ স্বার্থ রক্ষা করা।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর