
পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া (আংশিক) এলাকার পূর্বের সীমানা পুনর্বহালের দাবি নিয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে পাবনা-১ আসনের এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ নির্বাচন ভবনের সামনে পাবনা-১ আসনের শত শত বাসিন্দা জড়ো হন। এসময় তারা 'ইসির অবৈধ গেজেট মানি না, মানব না', 'পাবনার সাঁথিয়া-বেড়া ভাই ভাই, বিভক্তি মানি না' এমন স্লোগান দিতে থাকেন।
এলাকাবাসীরা জানান, বেড়া উপজেলা পরিষদ থেকে সাঁথিয়া উপজেলা পরিষদের দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটারের কম। অপরদিকে বেড়া উপজেলা পরিষদ থেকে সুজানগর উপজেলা পরিষদের দূরত্ব প্রায় ৩৮-৪০ কিলোমিটার। সুতরাং ভৌগোলিক বাস্তবতায় সাঁথিয়ার সঙ্গেই বেড়ায় সংযোগ সবচেয়ে যৌক্তিক। সাঁথিয়াতে (১০টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা) ভোটার সংখ্যা ৩,১৭,০৩৮ জন। এই সংখ্যা নির্বাচন কমিশনের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অপরদিকে বেড়া-সুজানগর একত্র করলে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪,৬২,৭৬৭ জন, যা অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অতিরিক্ত।
তারা আরও জানান, নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা অনুযায়ী ভোটার পার্থক্য সর্বোচ্চ ৩০% এর মধ্যে থাকতে হবে। বেড়া ও সুজানগর একত্র করলে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪০% বেশি হয়ে যায়, যা নীতিমালা বহির্ভূত। সাঁথিয়া, বেড়া ও সুজানগর উপজেলার জনগণের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জীবনধারা এক ও অভিন্ন। তাই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও সাঁথিয়া-বেড়া সংযুক্তিই যৌক্তিক।
এলাকাবাসীরা জানান, বেড়া উপজেলায় ৩টি প্রধান নদীবন্দর রয়েছে—বেড়া পোর্ট, নগরবাড়ি ঘাট, কাজিরহাট ঘাট। পূর্বের সীমানায় ১টি বন্দর পাবনা-১ এ এবং ২টি বন্দর পাবনা-২ এ অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা ভারসাম্যপূর্ণ। যদি সুজানগরের সঙ্গে বেড়া উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৪টি ইউনিয়ন যুক্ত করে দিলে ৩টি নদীবন্দরই পাবনা-২ সুজানগরে চলে যায়, অপরদিকে সাঁথিয়া উপজেলার কোনো নদীবন্দর থাকে না, যার কারণে কোনো উন্নয়ন হবে না। সাঁথিয়ার সঙ্গে বেড়ায় সড়ক যোগাযোগের দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার, আর বেড়া উপজেলা থেকে সুজানগর উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। সুতরাং একজন সাধারণ নাগরিকের জন্য প্রশাসনিক বা দাপ্তরিক কাজ করা খুবই কষ্টকর।
তারা বলেন, বেড়া আংশিক সুজানগর উপজেলার সঙ্গে যুক্ত হলে সুজানগরে ২টি পৌরসভা ও ১৯টি ইউনিয়ন হবে। অপরদিকে সাঁথিয়া উপজেলাতে মাত্র ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে, যা সুজানগর উপজেলার অর্ধেক হয়। যা কোনো মতেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এতে প্রশাসনিক সেবায় অসামঞ্জস্যতা তৈরি হবে। অতীতেও ৪০ বছরের ইতিহাসে নির্বাচন কমিশন ভৌগোলিক বাস্তবতা, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও যোগাযোগের সুবিধা বিবেচনা করে পাবনা-১ (সাঁথিয়া+বেড়া আংশিক) ও পাবনা-২ (সুজানগর+বেড়া আংশিক) নির্ধারণ করেছিল, যা ছিল সম্পূর্ণ যুক্তিযুক্ত ও বাস্তবসম্মত।
এলাকাবাসী জানান, ভৌগোলিক অবস্থান, ভোটার ভারসাম্য, নীতিমালা, শিক্ষা-সংস্কৃতি, নদীবন্দর, যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠামো ও ঐতিহাসিক বাস্তবতা বিবেচনায় সাঁথিয়া আংশিক বেড়া পুনর্বহালই একমাত্র যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য সমাধান।
জানা যায়, গত ৪ সেপ্টেম্বর ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এরপর থেকে সারাদেশের অনেক জায়গায় সীমানা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন সংশ্লিষ্ট আসনের এলাকাবাসীরা।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, সীমানা পুনঃনির্ধারণে ইসি সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। এ নিয়ে আদালতে বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর