
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে কেন্দ্রীয় সংসদ থেকে ৭ জন এবং হল সংসদ থেকে ১ জন, অর্থাৎ মোট ৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সর্বপ্রথম মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তাইফুল আলম ফরাজী, যিনি কেন্দ্রীয় সংসদে খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে লড়বেন।
রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে চাকসু নির্বাচন কমিশনের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয়। দুপুর ১টা পর্যন্ত এই তথ্য জানা যায়।
চাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন জানান, চাকসুর ২৬টি পদে এবং হলের ১৫টি পদে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ চলবে। আগামী ১২ অক্টোবর চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গত ২৮ আগস্ট ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শুরু হবে ১৮ সেপ্টেম্বর। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। এটি প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে ২৫ সেপ্টেম্বর।
১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা তাদের ১৪টি হলের অধীনে নির্বাচনে ভোট দিয়ে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন করবেন।
চাকসু নির্বাচনে ভিপি, জিএস, এজিএস ছাড়াও ক্রীড়া সম্পাদক, সহ-ক্রীড়া সম্পাদক, সাহিত্য সংস্কৃতি এবং প্রকাশনা সম্পাদক, সহ-সাহিত্য সংস্কৃতি এবং প্রকাশনা সম্পাদক, দপ্তর, সহ-দপ্তর, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক, সহ-ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক, সমাজসেবা ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক, সহ-যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক, আইন ও মানবাধিকার এবং পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক পদে এবং পাঁচটি নির্বাহী সদস্যসহ ২৬টি পদে নির্বাচন হবে।
এদিকে হলগুলোতে ভিপি, জিএস, এজিএস ছাড়া ক্রীড়া সম্পাদক, সাহিত্য সংস্কৃতি এবং প্রকাশনা সম্পাদক, দপ্তর, রিডিং, ডাইনিং ও হল লাইব্রেরি, সমাজসেবা, পরিবেশ ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক, বিজ্ঞান, গবেষণা তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক, যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক এবং তিনটি নির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচন হবে।
চাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এ তালিকায় নতুন করে ১ হাজার ৭৬৮ শিক্ষার্থী যুক্ত হচ্ছেন। এ হিসাবে বর্তমানে চাকসুতে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৬৩৪ জন। তবে এর মধ্যে ছাত্র ও ছাত্রীর সংখ্যা কত, তা আগামীকাল অথবা পরশুর মধ্যে জানানো হবে বলে নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী জানিয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের বাইরেও এমফিল ও পিএইচডির শিক্ষার্থীরা প্রার্থী হতে পারবেন। তবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় সব প্রার্থীকে ডোপ টেস্টের (মাদক পরীক্ষা) ফলাফল জমা দিতে হবে। নির্দিষ্ট ফি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে এ পরীক্ষা করাতে হবে। প্রার্থী পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া কিংবা নিতে আসতে পারবেন না।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব এ কে এম আশরাফুল হক সিদ্দিকী বলেন, কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র নিতে ৩০০ টাকা ফি দিতে হবে। আর হল সংসদের মনোনয়নপত্র নিতে ২০০ টাকা দিতে হবে। মনোনয়নপত্র নেওয়ার সময় অনলাইনে চূড়ান্ত ভোটার তালিকার প্রমাণ আর শিক্ষার্থীর ভোটার আইডি নম্বর দিতে হবে। এরপর পরিচয়পত্র দেখিয়ে মনোনয়ন নিতে হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় প্রার্থীকে তার পরিচয়পত্র, ছবি এবং ডোপ টেস্টের ফলাফল নিয়ে আসতে হবে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য মনোনয়নপত্রেও দেওয়া থাকবে।
১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর মোট ছয়টি চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭০ সালে চাকসুর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮১ সালে এবং ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয়।
১৯৮১ সালে ভিপি পদে জসীম উদ্দিন সরকার ও জিএস পদে আব্দুল গাফফারসহ ছাত্রশিবিরের পূর্ণ প্যানেল জয়ী হয়। এরপর ১৯৯০ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে তৎকালীন জাতীয় ছাত্রলীগের নেতা নাজিম উদ্দিন (ভিপি), আজিম উদ্দিন (জিএস) ও ছাত্রদলের মাহবুবুর রহমান শামীম (এজিএস) নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের নেতা ফারুকুজ্জামান নিহত হলে চাকসুর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর গত ৩৫ বছরে আর চাকসু নির্বাচন হয়নি।
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর