
বরগুনায় কোর্ট পুলিশের ব্যারাকে পুলিশের বিছানায় বসে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধ যুবলীগের উপজেলা সভাপতিকে ভাত খাওয়ালেন সাবেক ডিবির ওসি বশির আলম। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনায় বশির আলমসহ ব্যারাকে দায়িত্বরত ৬ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনার তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করেছেন বরগুনার পুলিশ সুপার।
বশির আলম আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কোর্ট পরিদর্শক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।
সন্ত্রাস দমন, বিস্ফোরক নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ একাধিক মামলার অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন যুবলীগ নেতা আরিফ উল হাসান। ব্যারাকে তার পাশে স্বজনদের সঙ্গে বসে থাকতে দেখা যায় কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক ও বরগুনার সাবেক গোয়েন্দা পুলিশের ওসি বশির আলমকেও।
২২ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, আরিফ তার স্বজনদের উপস্থিতিতে পুলিশের ব্যারাকে পুলিশের বিছানায় বসে ভাত খাচ্ছেন। ভিডিওর ৯ সেকেন্ডে দেখা যায়, একই বিছানায় কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক বশির আলমের সঙ্গে একান্ত আলাপ করছেন তিনি। এরপর তাকে আবারও খাবার খেতে দেখা যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়ও আলোচনায় ছিলেন বশির আলম। তখন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক হিসেবে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক হয়রানি করেছিলেন তিনি। সরকার পরিবর্তনের পর কর্মস্থল পরিবর্তন হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ সুযোগে আইনের বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করে এখনো প্রকাশ্য সহযোগিতা করছেন বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের। তাই কোর্ট পরিদর্শক বশির আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাদের।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. নুরুল আমিন বলেন, অ্যাডভোকেট আরিফ আমতলী যুবলীগ নেতা; তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন, বিস্ফোরক নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ঢাকা ও বরগুনায় মামলা রয়েছে। এছাড়া আমতলীতে তার স্ত্রীর দায়ের করা একটি যৌতুক মামলা আছে। এ মামলায় ২ সেপ্টেম্বর তাকে আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, খাবার খাওয়ার যে বিষয়টি শুনেছি, এটির আইনি সুযোগ নেই। এতে খাবারের মাধ্যমে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক বশির আলম বক্তব্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানান। এছাড়া প্রকাশিত ভিডিওতে তিনি বা এটি কোর্ট ব্যারাকের নয় বলেও দাবি করেন।
এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আল-মামুন শিকদার বলেন, ওই দিন হাজতখানায় মেরামতের কাজ চলছিল। ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে তাকে পুলিশি নিরাপত্তায় কোর্ট ব্যারাকে রাখা হয়। এ বিষয়টি আমাকে আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন। সেখানে তার কিছু আত্মীয়-স্বজনও এসেছিল। তবে ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রচারের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। তাদের নির্দেশনায় ওইদিন দায়িত্বে থাকা সব পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে বরগুনায় সংযুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের মার্চে বরগুনার বামনা থানার ওসি থাকাকালে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা ঘুস নেওয়ার অভিযোগে বশির আলম সমালোচনার মুখে পড়েন। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করলে তিনি বাধ্য হয়ে ২০ হাজার টাকা ফেরত দেন। পরবর্তীতে ওই ঘটনার জের ধরে তাকে বদলি করা হয়।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর