
“শিক্ষা কেবল জ্ঞান অর্জনের পথ নয় বরং নৈতিকতা ও মূল্যবোধ গঠনেরও মাধ্যম” এই অঙ্গীকারকে সামনে রেখে ২৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকাল তিনটায় বাংলাদেশের রাজধানীতে অবস্থিত জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরি হলের জমঈয়ত শুব্বানে আহলে হাদীস বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের যৌক্তিকতা ও বাস্তবতা শীর্ষক এক বর্ণাঢ্য জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানটি শুব্বানের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাফেজ আব্দুল্লাহ বিন হারিছ এর অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস এর মাননীয় সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক, প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো: শামছুল আলম, গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশ মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মোঃ নুরুল হক ।
এতে প্ৰবন্ধ উপস্থাপন করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (কুষ্টিয়া)'র আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড.আ.ব.ম সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী। এছাড়া আরও আলোচনা পেশ করেন বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের সহ-সভাপহি অধ্যাপক ড. আহমাদুল্লাহ ত্রিশালী, সেক্রেটারী জেনারেল ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ খাঁন মাদানী, সরকারী তিতুমীর কলেজের অধ্যাপক ড. ছদরুদ্দীন আহমদ, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক মুহাম্মদ ফতিহুল কাদির, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি (গাজীপুর)'র অধ্যাপক ড. আমান উদ্দীন মোঃ মুজাহিদ, সৌদি আরবের কিং খালিদ ইউনিভার্সিটির সাবেক অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ মাদরাসা বোর্ডের কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. হেদায়েতুল্লাহ, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের নির্বাহী সদস্য ড. মুজাফফর বিন মুহসিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ প্রমূখ ।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “অনতি বিলম্বে সরকার ঘোষিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গানের শিক্ষক নিয়োগ প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে হবে এবং ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, এটা এদেশের নব্বই পার্সেন মুসলিমের পক্ষে এবং বিশেষ করে এদেশের চার কোটি আহলে হাদীসের পক্ষ থেকে আমাদের দাবী।” আমরা আশা করি সরকার আমাদের দাবী মেনে নিবেন ।
প্রধান আলোচক তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমাদের কোমলমতি শিশুদের ছোটবেলায় যে শিক্ষায় আমরা গড়ে তুলি, সেই শিক্ষা নিয়ে ওরা বেড়ে উঠে। আমরা চাই আমাদের শিশুরা তাদের জ্ঞান অনেশ্বনের প্রাথমিক স্তর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্ব- ধর্মের ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে বেড়ে উঠুক। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গানের নয়, ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিন ।
মূল প্রবন্ধে উপস্থাপক দেখান যে, ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগে দীর্ঘদিনের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে আধুনিক ও মানসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করে কীভাবে দ্রুত সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ্য ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যায় এবং ধর্মীয় শিক্ষার বিকাশে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতার স্বরূপ তুলে ধরেন।
তিনি তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখযোগ্য কিছু সুপারিশমালা তুলে ধরে বলেন- ১. প্রথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের ইসলামী শিক্ষা নিশ্চিত করে শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, ২. ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় পদে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে কামিল ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি, ইসলামিক স্ট্যাডিজ এবং কওমী মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস ডিগ্রিধারীদের ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, ৩. বিভিন্ন ধর্মের জন্য তাদের উপাসনালয়ে ধর্মীয়
শিক্ষার ব্যাবস্থা করতে হবে।
আলোচকবৃন্দ একমত হয়ে বলেন,
√ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষার মানোন্নয়নে টেকসই নীতি প্রণয়ন করতে হবে।
v গানের শিক্ষক প্রজ্ঞাপন বাতীল পূর্বক ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ প্রজ্ঞাপন জারী করতে হবে।
√ ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় পদে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে কামিল ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি, ইসলামিক স্ট্যাডিজ এবং কওমী মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস ডিগ্রিধারীদের ধর্মীয় শিক্ষক পদে প্রজ্ঞাপন জারী করতে হবে।
√ নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও রিফ্রেশার কোর্সের মাধ্যমে শিক্ষকদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জমঈয়ত শুব্বানে আহলে হাদীস বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সভাপতি শাইখ মোঃ আব্দুল্লাহিল হাদী, তিনি তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, “জাতির আগামী প্রজন্মকে যদি আমরা জ্ঞান ও নৈতিকতার আলোয় আলোকিত করতে চাই তবে দক্ষ, সৎ ও নিবেদিত প্রাণ ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগে আমাদের আর দেরি করা চলবে না।"
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর